যয়ীফ হাদীস গ্রহণের কারণ কি? পর্ব-২








কোন যঈফ হাদীসকে উম্মত যখন কবূলের দৃষ্টিকোন থেকে গ্রহণ করে তখন তার উপর আমল করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

কখনও কখনও কোন হাদীসের প্রতি সহীহ হওয়ার হুকুম লাগানো হয় যখন তা উম্মত (এর আয়িম্মায়ে কেরাম ও মুহাদ্দিসীন) কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহণ করে। যদিও তার কোন সহীহ সনদ না থেকে থাকে।

হাফেয সাখাবী (রহঃ) ফাতহুল মুগীছে বলেন –
”উম্মত যখন কোন যঈফ হাদীসকে কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহণ করে তখন তার উপর আমল করা হবে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী। এমনকি তা মুতাওয়াতের এর পর্যায়ে পৌছে যায়। ফলে তা অটাক্যভাবে প্রমাণীত কোন বিষয়কেও রহিত করে দেয়। এজন্যই ইমাম শাফী (রহঃ) “ওয়ারিসের জন্য কোন ওসিয়ত নেই” এই হাদীসের ব্যপারে বলেছেন মুহাদ্দিসীনে কেরাম উক্ত হাদীসটি সহীহ সনদে মেনে নেননি। তবে উম্মত তা গ্রহণ করেছে এবং তার উপর আমল করেছে। এমনকি কুরআনের ওসিয়তের আয়াতকে পর্যন্ত তা রহিত করে দিয়েছে।”
- হাফেয সাখাবী, ফাতহুল মুগীছ, পৃষ্ঠা ১২০

আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) বলেন-
”ইবনু আব্দিল বার তার ইস্তেযকার নামক কিতাবে যখন তিরমিজী (রহঃ) এর এই বক্তব্য বর্ণনা করেন, ইমাম বুখারী সুমুদ্রের হাদীসকে সহীহ বলেছেন “তার পানি পবিত্র” অথচ মুহাদ্দিসীনগণ এ ধরনের সনদকে সহীহ বলেন না ’ তখন বলেন তবে হাদীসটি আমার নিকট সহীহ কেননা উলামায়ে কেরাম তা কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহণ করেছেন।”
- আল্লামা সুয়ূতী, তাদরীবুল রাবী, পৃষ্ঠা ২৫

আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) বলেন,
“হাদীসটি তিরমিজী (রহঃ) এনেছেন এবং বলেছেন ইমাম আহমাদ সহ অন্যরা হুসাইনকে যঈফ বলেছেন। আহলে ইলমদের নিকট উক্ত হাদীসের উপর আমল জারী রয়েছে। একথা দ্বারা তিরমিজী (রহঃ) এদিকে ইশারা করেছেন যে, হাদীসটি উলামাদের সমর্থনে শক্তিশালী হয়েছে। আর অনেকেই স্পষ্টভাবে একথা উল্লেখ করেছেন আহলে ইলমদের কোন হাদীসের সপক্ষে বক্তব্যই হাদীস সহীহ হওয়ার দলীল। যদিও তার নির্ভরযোগ্য কোন সনদ না থেকে থাকে।”
আত-তাআক্কুবাত, পৃষ্টা ১২

অন্যত্র আল্লামা সুয়ুতী (রহঃ) বলেন-
”যখন মানুষ কোন হাদীসকে কবূলের দৃষ্টি কোন থেকে গ্রহণ করে তখন উক্ত হাদীসকে সহীহ হওয়ার ফয়সালা দেওয়া হয়। যদিও তার কোন সহীহ সনদ না থেকে থাকে।”
-তাদরীবুর বারী, পৃষ্ঠা ২৪

হাফেয ইবনে হাজার বলেন-
“কোন হাদীস কবূল হওয়ার গুনাবলীর মধ্য হতে একটি হল হাদীসের বিষয়বস্তুর উপর উলামায়ে কেরাম আমলের ব্যপারে একমত হবেন। এমন হাদীসকে কবূল করা হবে এমনকি তার উপর আমল করা ওয়াজিব। আয়িম্মায়ে উছুলের একটি জামাআত এমনটি বলেছেন।

তার উদাহরণ সমূহের মধ্য থেকে হল, ইমাম শাফী (রহঃ) এর বক্তব্য নাপাকী পানিতে প্রবেশের দ্বারা নাপাক হওয়ার ব্যপারে যখন পানির স্বাদ বা গন্ধ বা রং পরিবর্তন হয়ে যায়, তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এমন সূত্রে বর্ণিত যা মুহাদ্দিসীনগণ (আমলযোগ্য) সাব্যস্ত করেন না। অথচ এটাই সকলের মত। উলামাদের এ বিষয়ে কোন মতবিরোধ আমার জানা নেই।”
– আল ইফসা আলা নুকাতি ইবনুস সালাহ

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম হাম্বলী (রহঃ) কিতাবুর রূহ এ মৃত ব্যক্তিকে কবরে তালকীনের ব্যপারে মু’জামে তাবারানীর একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেন, হাদীসটি যদিও (সহীহ সূত্রে) প্রমাণীত নয় তবে সকল যুগে ও সকল শহরে হাদীসটির উপরে কোন আপত্তি ছাড়াই আমল চালু থাকা হাদীসটির উপর আমলের জন্য যথেষ্ট।

এর পূর্বে তিনি বলেন ইমাম আহমাদকে (রহঃ) এ আমলের ব্যপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি এটাকে উত্তম বলেছেন এবং উক্ত হাদীসের উপর উম্মতের আমলকে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন।       
-কিতাবর রূহ, পৃষ্ঠা ১৪

মুহক্কিক ইবনুল হুমাম (রহঃ) ফাতহুল ক্বদীরে বলেন-
“কোন হাদীসের স্বপক্ষে উলামায়ে কেরামের আমল হাদীসটিকে সহীহ সাব্যস্ত করার একটি কারণ। আর ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন কোন হাদীস মদীনাতে প্রসিদ্ধ হওয়া তার সনদ সহীহ হওয়াকে বেনিয়াজ করে দেয়।”
– ফাতহুল ক্বাদীর ৩/১৪৩

Comments

Popular posts from this blog

হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু'র প্রকৃত হত্যাকারী কে....?

ইসলামী গজল গাওয়া বা শোনা কি জায়েজ?

নামধারী আহলে হাদিস বিদাতী ফিরকার ইসলাম বিরোধী ৫০টি ভ্রান্ত মতবাদ