মাজহাব মানা ফরজ নাকি দ্বীন মানা ফরজ?










একটি উদ্ভব প্রশ্নের সহজ পর্যালোচনা
___________________________________

আমআমা আহলে হাদিস জামাতের কিছুকিছু ভাইয়ের কাছে একটা প্রশ্ন প্রায় শোনা যায় যে, চার মাজহাবের এক মাজহাব মানা ফরজ তার দলিল কি?।

আসলে এই ধরনের প্রশ্নগুলি সম্পূর্ণ উদ্ভব প্রশ্ন। যখন মাজহাবিগন মনেই করেননা চারেক এক মাজহাব মানা ফরজ তখন এই প্রশ্ন সম্মুখীন মাজহাবিদের হতেই হবে কেন আর এর উত্তর চাওয়া হয় কেন। যখন এই ধারনার অস্তিত্বই নাই তখন এই প্রশ্ন এলো কোথা থেকে?।
আসলে এটি কিছু সুবিধাবাদি শায়েখদের উদ্ভব করা প্রশ্ন আর এই প্রশ্ন তাদেরই প্রোপাগান্ডার শিকার হওয়া যুবকদের শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চারেক এক যেকোন মাজহাব মানা ফরজ একথা আমি কোন দিন শুনিনি। তবে একথা অস্বীকার করার নয় যে,  সাধারনদের জন্য একজন বিজ্ঞ আলিমের তাকলীদ করা অর্থাৎ তাঁর জ্ঞানের উপর আস্থা রেখে তার অনুসরণ করা ওয়াজিব। আহলে হাদিস ভাইদের মান্যবর সালাফি উলামা শায়েখ উসাইমিন রহঃ তো এমনটা করাকে ফরজ পর্যন্ত বলেছেন।
তিনি বলেন,
যেসব সাধারণ মানুষ সরাসরি শরীয়তের বিধি-বিধান জানতে সক্ষম নন তাদের জন্য তাকলীদ করা ফরয। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
فَسْـَٔلُوٓا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
তোমরা যদি না জান তাহলে আহলে ইলমদের জিজ্ঞাসা কর।
(আলউসুল মিন ইলমিল উসূল, পৃ. ৮৭)

আসুন অল্প কথায় জেনে নেওয়া যাক মাজহাবের প্রয়োজনীয়তা কখন ও কেন?

প্রত্যেক মুসলিমের উপর দ্বীন ইসলামের হুকুম আহকাম পালন করা অবশ্যক। সেই হুকুম আহকামের মধ্যে কিছু আছে ফরজ,কিছু ওয়াজিব, কিছু সুন্নাহ,কিছু মোস্তাহাব, কিছু মুস্তাহাসান এবং কিছু মোবাহ।
কোনটার হুকুম ফরজ, কোনটা ওয়াজিব, কোনটার সুন্নাহ ইত্যাদি হুকুম আহকামগুলি রাসূল সাঃ পৃথক পৃথক করে দিয়ে যাননি। রাসূল সাঃ পরিপূর্ণ দ্বীনকে তাঁর উম্মাতের কাছে পৌঁছে দিয়েগেছেন এবং এই দ্বীনকে আরো সহজ-সরল ভাবে মানুষের সুবিধার্থে বিভিন্ন হুকুম আহকাম গুলির শ্রেনীবিভাগ করার মাধ্যমে একটি মাজহাবের রূপ দিয়েছেন প্রীয় রাসূল সাঃ এর একদল মুজতাহিদ ফকিহগন। তাই যেকোন মাজহাবকে মানলে দ্বীন ইসলামের উপর চলা সহজ সরল হবে। এটাই মাজহাবের আসল স্বরূপ।
তাহলে কি মাজহাব মানা ফরজ হলো?  না। তবে একজন সাধারন ব্যাক্তির জন্য উলামাকেরামের সান্নিধ্য গ্রহন করা,উলামাকেরামের অনুসরন করা, উলামাকেরামের থেকে দ্বীনের হুকুম আহকাম শিখে ও জেনে আমল করা ফরজ।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
হে মুমিনগন! আল্লাহকে ভয় কর, আর সৎকর্মপরায়নশীলদের সাথে থাক।
(সূরা তাওবা-১১৯)
তিনি আরো ইরশাদ করেন,
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوٓا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِى الْأَمْرِ مِنكُمْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, আরও আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীলদের ।
(সূরা নিসা - ৫৯)
এখানে উল্লেখিত উলিল আমর দ্বার উলামাগন ও মুসলিম শাসক বোঝানো হয়েছে (ইবনে কাসির)

অন্য আয়াতে উল্লেখ হয়েছে,
فَسْـَٔلُوٓا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
"তোমরা যদি না জানো তবে জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞাসা কর" (সূরা নাহলঃ ৪৩)।

তিনি ইরশাদ করেন,
وَإِذَا جَآءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِۦ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلٰىٓ أُولِى الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنۢبِطُونَهُۥ مِنْهُمْ

যখন শান্তি বা শংকার কোন সংবাদ তাদের কাছে আসে তখন তারা তা প্রচার করে থাকে । যদি তারা তা রাসূল এবং তাদের মধ্যে যারা নির্দেশ প্রদানের অধিকারী তাদেরকে জানাত, তবে তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধান করে তারা সেটার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত।
(সূরা নাহল ৮৩)
এখানেও অজানা বিষয়ে জানতে রাসূল সাঃ এর সাথে সাথে উলিল আমর অর্থাৎ উলামাসমাজের নিকট জানার হুকুম দেওয়া হয়েছে।
অনেকেই আবার বলেন শুধু রাসূল সাঃ কে মানবো আর বাকিদের কেন মানবো! এই আয়াতে তাদের জন্য চিন্তার খোরাক রয়েছে,যে রাসূল সাঃ এর পর অন্য কারো হুকুম মানার কথার পাশাপাশি রাসূল সাঃ সাথে সাথে অন্য কারো হুকুম মানার কুরান ঘোষণা দিয়েছে।
তবে এই আয়াতকে যদি গভীরভাবে চিন্তা করা হয় তাহলে নিশ্চয় বুঝবো যে, রাসূল সাঃ কে শরিয়তের দলিল এবং উলিল আমর মুজতাহিদ ফকিহদের সেই দলিলের আলোকে হুকুম আহকামের নির্দেশদাতা হিসাবে গ্রহন করার কথা বলা হয়েছে।

তাই উপরিক্ত আলোচনা দ্বারা আমরা বলবো না যে,  চারের এক যেকোন মাজহাব মানা ফরজ বরং বলবো সাধারণদের জন্য মুজতাহিদ উলামাদের মাজহাব অর্থাৎ তাঁদের গবেষণালব্ধ মতপথ মান্য করা ,সৎকর্মশীলদের সাথে থাকা, আমাদের উপর কর্তৃক অধিকারী উলামাদের অনুসরণ করা এবং দ্বীনি বিষয়ে না জানা হুকুমগুলির ক্ষেত্রে আলিমদের জিজ্ঞাসা করা কুরানের হুকুমে ফরজ।

Comments

Popular posts from this blog

হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু'র প্রকৃত হত্যাকারী কে....?

ইসলামী গজল গাওয়া বা শোনা কি জায়েজ?

নামধারী আহলে হাদিস বিদাতী ফিরকার ইসলাম বিরোধী ৫০টি ভ্রান্ত মতবাদ