কথিত আহলে হাদীসরা নিজেদের ফতোয়ায় নিজেরাই মুশরিক








 প্রমাণ নিচে দেয়া হলো।

মাযহাব কুরআন ও হাদীসের বাইরের কোন কিছু নয়। বরং কুরআন ও হাদীসের সকল বিধানের একটি
বিন্যস্ত রূপের নাম মাযহাব। সুতারাং এটি মাযহাবী বক্তব্য কুরআন ও হাদীসের নয়,এমনটি বলাই অজ্ঞতা। কুরআন ও হাদীসের বক্তব্যের উল্টো মাযহাবের
বক্তব্য হতেই পারে না। যে মুজতাহিদ তার মাযহাব মানার প্রয়োজন নেই, এ ছাড়া সবার মানতে হবে । কারণ কুরআন হাদিস বুঝা এক বিষয় আর কুরআন হাদিস থেকে মাসাআলা উদ্ভাবন করা আরেক বিষয় । তাই তো ইমাম বুখারী, মুসলিম, তিরমিযি, আবু দাউদ প্রমুখ সব ইমাম, বিজ্ঞ মুহাদ্দিস হওয়ার পরেও কোন
না কোন মাযহাবের অনুসরণ করেছেন কারণ তারা মুহাদ্দিস ছিলেন মুজতাহিদ ছিলেন না আর মুজতাহিদ না হলে কুরআন হাদীস থেকে জীবনের প্রয়োজনীয় সব মাসআলা উদ্ভাবন করা সম্ভব নয় ।

যে ব্যক্তি কুরআন ও হাদীসকে অনুবাদ ছাড়া মূল কিতাব থেকে বুঝতে সক্ষম নয়। জানে না আরবী শুদ্ধ করে পড়তেও। কোন হাদীসই সনদসহ মুখস্ত নেই। সনদের প্রতিটি রাবীর জীবনী মুখস্ত নয়। রাবীদের বিরুদ্ধে বা পক্ষে বলা মুহাদ্দিসীনদের বক্তব্য মুখস্ত নেই। মুহাদ্দিসীনগণ কোন কারণে রাবীকে দুর্বল বা সহীহ বলেছেন তা জানা নেই। আরবী ব্যকরণ শাস্ত্র সম্পর্কে নেই পর্যাপ্ত জ্ঞান। কুরআনের অলংকারশাস্ত্র সম্পর্কে নেই কোন জ্ঞান। পূর্ণ কুরআনের নাসেখ-মানসূখ, হাদীসের নাসেখ মানসূখ, সকল আয়াতের শানে নুজুল, হাদীসের শানে ওরূদ সম্পর্কে নেই কোন ইলম।এরকম অজ্ঞ ব্যক্তি কি করে জীবনের প্রয়োজনীয় সব মাসআলার সমাধান কুরআন হাদীস থেকে উদ্ভাবন করবে ?

এমন অজ্ঞ ব্যক্তি যদি শুধু অনুবাদ পড়ে, কিংবা রাসূল সাঃ এর বলা খাইরুল কুরুন তথা শ্রেষ্ঠ যুগের পরের কোন উম্মতের ব্যাখ্যার আলোকে নিজের মনমত যেটাকে ইচ্ছে গ্রহণ-বর্জন করাই কতটুকু ইসলাম মানা হবে ? একবার ভেবে দেখবেন কি ? এর পরেও একটি প্রশ্ন থেকেই যায় তা হলো সকল তাফসীর ও হাদীসের কিতাবের তো অনুবাদ হয়নি, আর যেগুলোর অনুবাদ হয়েছে সেগুলো যে ভুল নয় তা বুঝবেন কি করে ? সুতরাং বিচক্ষণ ব্যক্তির কাজ হবে মাযহাবের বিজ্ঞ মুজতাহিদ + মুহাদ্দিস+ ফকীহ + তাবেঈ বা তাবে তাবেঈর কোন মাযহাবের উপর আমল করা।

যদি আহলে হাদীসগণ প্রকৃত অর্থেই গায়রে মুকাল্লিদ তথা লা মাযহাবী হতো তাহলে তারা মাসআলা শুধু তাদের আহলে হাদীস আলেমদেরকে জিজ্ঞাসা করতো না, হানাফী, শাফেয়ী,হাম্বলী,মালেকী সব আলেমকেই জিজ্ঞাসা করতো। কিন্তু সবাই জানে তারা তাদের আলেম ছাড়া আর কোন আলেমকে গ্রহণযোগ্য মনে করে না এর দ্বারা বুঝা গেল তারা কারো না কারো তাকলীদ করেই। কিন্তু তারা দাবি করে আমরা কারো তাকলীদ করি না এটা সম্পূণই মিথ্যা কথা ।

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَبِيدَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَجِيءُ أَقْوَامٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ، وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ ‏"‏‏.‏ قَالَ إِبْرَاهِيمُ وَكَانُوا يَضْرِبُونَنَا عَلَى الشَّهَادَةِ وَالْعَهْدِ‏.‏
হযরত আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত
রাসূল সাঃ বলেছেন, আমার যুগের সাহাবীরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি, অতপর তাবেঈরা। অতপর তাবে তাবেঈরা। এরপর এমন সব ব্যক্তি আসবে যারা কসম করার আগেই সাক্ষ্য দিবে, আবার সাক্ষ্য দেয়ার আগে কসম করে বসবে। ( সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৫২ ) ইমাম আবু হানিফা রহঃ একজন তাবেঈ আর বাকি তিন ইমাম হলো তাবে তাবেঈ উনারা সবাই মুহাহাদ্দিস, ফকীহ ও মুজতাহিদ এবং সর্বোত্তম ব্যক্তি। আর নামধারী আহলে হাদীস বক্তারা  সবাই হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী নিকৃষ্ট ব্যক্তি এবার ভেবে দেখুন কার কথা মানবেন ?

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) লিখেছেন,
 ﻭﻗﺪ ﻗﺎﻝ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻨﺎﺱ : ﺃﻛﺜﺮ ﻣﺎ ﻳﻔﺴﺪ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻧﺼﻒ ﻣﺘﻜﻠﻢ ، ﻭﻧﺼﻒ ﻣﺘﻔﻘﻪ ، ﻭﻧﺼﻒ ﻣﺘﻄﺒﺐ ، ﻭﻧﺼﻒ ﻧﺤﻮﻱ ، ﻫﺬﺍ ﻳﻔﺴﺪ ﺍﻷﺩﻳﺎﻥ ﻭﻫﺬﺍ ﻳﻔﺴﺪ ﺍﻟﺒﻠﺪﺍﻥ ، ﻭﻫﺬﺍ ﻳﻔﺴﺪ ﺍﻷﺑﺪﺍﻥ ، ﻭﻫﺬﺍ ﻳﻔﺴﺪ ﺍﻟﻠﺴﺎﻥ )
“দুনিয়াকে সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে, আধা বক্তা, আধা ফকীহ, আধা ডাক্তার এবং আধা ভাষাবিদ। এদের একজন (আধা বক্তা) দ্বীনকে ধ্বংস করে, অপরজন (আধা ফকীহ) দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করে। আধা ডাক্তার মানুষের শরীরকে নিঃশেষ করে। আর আধা ভাষাবিদ ভাষাকে বিনষ্ট করে।”
[মাজমুউল ফাতাওয়া, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-১১৮]

এবার আপনিই বলুন বর্তমান যামানার ফকীহ কি আধা ফকীহ নয় ? কারণ তারা জীবনের সব মাসআলা কুরআন হাদীস থেকে বের করতে পারে না। কিন্তু চার ইমাম পূর্ণ ফকীহ তাহলে কি তাদের কারো অনুসরণ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয় ?

عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ
হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম বলতে গিয়ে ইজতিহাদ করে,আর তার ইজতিহাদ সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদে ভুল হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৯১৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৮৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৭৬}

মুজতাহিদের অনুসারী মুকাল্লিদের কোন চিন্তার কারণ নেই। অতিরিক্ত পন্ডিতিরও কোন দরকার নেই।কারণ রাসূল সাঃ ঘোষণা অনুযায়ী মুজতাহিদের যদি মাসআলা বলতে ভুলও হয়, তাহলেও তিনি একটি নেকি পাচ্ছেন। আর সঠিক হলে দুইটি নেকি পাবেন।

তাই মুজতাহিদের ইজতিহাদকৃত মাসআলায় চলার দ্বারা সওয়াব পাওয়া নিশ্চিত। চাই একটি হোক বা দুইটি। সওয়াবহীন কখনোই হবে না। তাই ভুলের উর্ধে কেউ নয় একথা সত্য। কিন্তু সবার ভুলেই সওয়াব হবে একথা কিন্তু নেই। কিন্তু মুজতাহিদের ভুলেও সওয়াবের নিশ্চয়তা রয়েছে। তাই মোটা ব্রেইনে চিন্তা করে নিজের ধারণার মতে মুজতাহিদের ভুল সিদ্ধান্ত ধরে নিজের মনগড়া মত মানা। যে ভুলের উপর জাহান্নামী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার দিকে যাওয়াটা কতটুকু যৌক্তিক ? সেই হিসেবে মুজতাহিদের সওয়াব নিশ্চিত মতামত মানাটা অধিক যৌক্তিক নয় কি ?

অথচ নামধারী আহলে হাদীসরা বলে,তাকলীদ করা তথা মাযহাব মানা শিরক, আর মুকাল্লিদরা মুশরিক। [তথ্যসূত্রঃ আহলে হাদীস মাসউদ সাহেবের লেখা বইয়ের কামাল আহমাদের অনূদিত সালাফী পাবলিকেশন্স ঢাকা থেকে মুদ্রিত “মাযহাব ও তাকলীদ” নামক বইয়ে তাকলীদকে একাধিক স্থানে শিরক এবং মুকাল্লিদকে মুশরিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম নামক এক আহলে হাদীসের লেখা মাযহাবীদের গুপ্তধন নামক বইয়েও একই বক্তব্য স্থান পেয়েছে যে, তাকলীদ করা শিরক। আর মুকাল্লিদরা মুশরিক]

এদিকে নামধারী আহলে হাদীস লিডার ড. ইমাম হোসাইন তার এক বক্তব্যে বলেছেন যে, যারা সহীহ আকীদায় বিশ্বাসী অর্থাৎ আহলে হাদীস তাদেরও একটা ফিকহি মাযহাব আছে। আর সেটার নাম হচ্ছে "আত তানাক্কুল বায়নাল মাযাহিবিল ফিকহিয়্যা "। ভিডিও লিঙ্ক: https://youtu.be/-D53K0Hjv6Q

যে সমস্ত গণ্ড মূর্খ লা মাযহাবীরা তথা নামধারী আহলে হাদীসরা জ্ঞান সল্পতার কারণে প্রচার করছে যে তাকলীদ করা তথা মাযহাব মানা শিরক,আর মুকাল্লিদরা মুশরিক। তারা স্বঘোষিত ভাবে তাদের আলেমের বক্তব্যের মাধ্যমে মুশরিক হয়ে গেল!!

যেহেতু তাদের মানহাজের আলেম স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দিয়েছে যে আহলে হাদীসদেরও একটা মাযহাব আছে এবং তার নামও স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করে দিয়েছেন। তাহলে বুঝা গেলো তারা মাযহাবীদেরকে মুশরিক বানাতে গিয়ে উল্টো তারাই স্বঘোষিত ভাবে মুশরিক হয়ে গেলো। এই হলো নামধারী আহলে হাদীস ওরফে লা-মাযহাবীদের কাণ্ড। আল্লাহ এদেরকে হেদায়েত দান করুন আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন ।

Comments

  1. PECHATIC TIRON BOLTON FOUNTAIN HOLDINGS
    PECHATIC TIRON BOLTON FOUNTAIN titanium pot HOLDINGS. - thinkpad x1 titanium This wood frame how strong is titanium is about 60" high with a beautiful titanium alloy nier matte black color and is perfectly engraved. Rating: 3.9 · titanium build ‎10 votes

    ReplyDelete
  2. অন্ধনুসারণ!!! এভাবে আপনি তো মদিনা মুনাওয়ার তে যে বিশুদ্ধ ইলম তাকে অপমান করেছেন। সালাফা সালেহীন দের বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন। আর আপনি আসলে অনেক কিছুই জানেন না অনেক কিছুই ভুল জানেন ফিকহী মদিনা এর অনুসারীদের সম্পর্কে

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু'র প্রকৃত হত্যাকারী কে....?

ইসলামী গজল গাওয়া বা শোনা কি জায়েজ?

নামধারী আহলে হাদিস বিদাতী ফিরকার ইসলাম বিরোধী ৫০টি ভ্রান্ত মতবাদ