বিতর নামাজ তিন রাকা'আত পর্ব-২






এক সালামে তিন রাকা‘আত বিতর

এক সালামে তিন রাকা‘আত বিতর ও দ্বিতীয় রাকা‘আতে শুধু তাশাহহুদ:

(১) সাবেত আল বুনানী রহ. বলেন, হযরত আনাস রা. আমাকে বলেছেন, হে আবূ মুহাম্মাদ (সাবেতের উপনাম) আমার কাছ থেকে শিখে নাও। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে গ্রহণ করেছি, আর তিনি আল্লাহ তা‘আলা থেকে গ্রহণ করেছেন। তুমি শেখার জন্য আমার থেকে অধিক নির্ভরযোগ্য অন্য কাউকে পাবে না।

সাবেত আল বুনানী রহ. বলেন:

ثُمَّ صَلّٰى بِيَ الْعِشَاءَ ثُمَّ صَلّٰى سِتَّ رَكَعَاتٍ يُسَلِّمُ بَيْنَ الرَّكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَوْتَرَ بِثَلَاثٍ يُسَلِّمُ فِيْ آخِرِهِنَّ.

অর্থ: অতঃপর তিনি আমাকে নিয়ে ইশার নামায পড়লেন। এরপর ছয় রাকা‘আত নামায পড়লেন এবং প্রতি দুই রাকা‘আতে সালাম ফিরালেন। তারপর তিন রাকা‘আত বিতর পড়লেন এবং সবশেষে সালাম ফিরালেন। (তারীখে দিমাশক, ইবনে আসাকির: ৯/৩৬৩, আনাস ইবনে মালেক অধ্যায়। সুনানে তিরমিযী হা. নং ৩৮৩১। আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশমিরী রহ. বলেন, এ হাদীসের সনদ মজবুত। তহাবী: ১/২০৬, ইবনে আবী শাইবাহ হা. নং ৬৯১০)

(২) সা’দ ইবনে হিশাম রহ. বলেন:

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوتِرُ بِثَلَاثٍ لَا يُسَلِّمُ إِلَّا فِي آخِرِهِنَّ» وَهَذَا وِتْرُ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ «وَعَنْهُ أَخَذَهُ أَهْلُ الْمَدِينَةِ».

অর্থ: আয়িশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন রাকা‘আত বিতর পড়তেন এবং শেষ রাকা‘আতের পূর্বে সালাম ফিরাতেন না। মুস্তাদরাকে হাকেমের বর্ণনায় রয়েছে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর রা.ও বিতর এভাবে পড়তেন এবং তার কাছ থেকেই মদীনাবাসী এ আমল গ্রহণ করেছেন। (ইমাম হাকেম, যাহাবী, ‘আইনী, নববী ও আনওয়ার শাহ কাশমিরী রহ. প্রমুখ হাদীসটি সহীহ বলেছেন। মুস্তাদরাকে হাকেম: ১/৩০৪, হা. নং ১১৮১, তহাবী : ১/১৯৩, নাসাঈ : ১/২২৮, হা. নং ১৬৯৮, ইবনে আবী শাইবাহ: ৪/৪৯৩-৪৯৪ হা. নং ৬৯১৩, কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ: ১/১৩৭)

উল্লেখ্য যে, হাদীস শাস্ত্রের বিখ্যাত ইমাম ইবনুল জাওযী, ইমাম যাহাবী ও ইবনে হাযম জাহেরী রহ. প্রমুখ বলেন, এ হাদীস থেকে বোঝা যায় নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিতর নামায ছিলো তিন রাকা‘আত এক সালামে, তবে তাতে মাগরিবের মতো মাঝে বৈঠক করতেন, কিন্তু সেই বৈঠকে সালাম ফিরাতেন না। (আত তানকীহ, যাহাবী: ১/৩২৬, আল মুহাল্লা: ২/৮৯, আত তাহকীক ফি মাসাইলিল খিলাফ ওয়াত তানকীহ লিবনি আব্দুল হাদী)

(৩) হযরত আয়িশা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পুরো নামাযের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন:

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «يَسْتَفْتِحُ الصَّلَاةَ بِالتَّكْبِيرِ. وَالْقِرَاءَةِ، بِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَكَانَ إِذَا رَكَعَ لَمْ يُشْخِصْ رَأْسَهُ، وَلَمْ يُصَوِّبْهُ وَلَكِنْ بَيْنَ ذَلِكَ، وَكَانَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ لَمْ يَسْجُدْ، حَتَّى يَسْتَوِيَ قَائِمًا، وَكَانَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السَّجْدَةِ، لَمْ يَسْجُدْ حَتَّى يَسْتَوِيَ جَالِسًا، وَكَانَ يَقُولُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ التَّحِيَّةَ.

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায শুরু করতেন তাকবীর দিয়ে এবং ক্বিরা‘আত শুরু করতেন ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ দিয়ে, রুকূতে মাথা উপরেও উঠাতেন না, আবার নিচেও নামাতেন না। বরং মাঝামাঝি অবস্থায় রাখতেন। রুকূ থেকে সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সিজদায় যেতেন না। এক সিজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে না বসে আরেক সিজদা করতেন না। আর তিনি বলতেন, নামাযের প্রতি দুই রাকা‘আতেই একবার আত্তাহিয়্যাতু পড়বে। (সহীহ মুসলিম হা. নং ১১৩৮)

(৪) হাবীব আল মুআল্লিম রহ. বলেন:

قِيلَ لِلْحَسَنِ: إِنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ يُسَلِّمُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ مِنَ الْوِتْرِ فَقَالَ: «كَانَ عُمَرُ أَفْقَهُ مِنْهُ، كَانَ يَنْهَضُ فِي الثَّالِثَةِ بِالتَّكْبِيرِ»

অর্থ: হাসান বসরী রহ.কে জিজ্ঞাসা করা হলো, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. কি (তিন রাকা‘আত) বিতরের দুই রাকা‘আতের পর সালাম ফিরিয়ে তৃতীয় রাকা‘আত পৃথক পড়তেন? তিনি বলেন, তার পিতা হযরত উমর রা. তার থেকে প্রজ্ঞাবান ছিলেন। তিনি (দ্বিতীয় রাকা‘আতে স্বাভাবিক নিয়মে বৈঠক শেষে সালাম না ফিরিয়ে) তাকবীর বলে তৃতীয় রাকা‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। (মুস্তাদরাকে হাকেম হা. নং ১১৪১, সুনানে কুবরা বাইহাকী হা. নং ৫০০৩, সালাতুল বিতর মারওয়াযী: পৃ. ২৭০। এ হাদীসের সনদ সহীহ। হাফেজ ইবনে হাজার রহ. মৌনভাবে এর সমর্থন করেছেন। ফাতহুল বারী: ২/৫৫৮)

(৫) আবূ ইসহাক রহ. বলেন:

«كَانَ أَصْحَابُ عَلِيٍّ، وَأَصْحَابُ عَبْدِ اللَّهِ لَا يُسَلِّمُونَ فِي رَكْعَتَيِ الْوَتْرِ»

অর্থ: হযরত আলী ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর শিষ্যগণ (তিন রাকা‘আত) বিতরের দ্বিতীয় রাকা‘আতে সালাম ফিরাতেন না। (ইবনে আবী শাইবাহ: ৪/৪৯৩, হা. নং ৬৯১১, সালাতুল বিতর মারওয়াযী: পৃ. ২৭১)

(৬) আবূয যিনাদ রহ. বলেন:

عَنِ السَّبْعَةِ، سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ , وَعُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ , وَالْقَاسِمِ بْنِ مُحَمَّدٍ , وَأَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ , وَخَارِجَةَ بْنِ زَيْدٍ , وَعُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ , وَسُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ , فِي مَشْيَخَةٍ سِوَاهُمْ أَهْلِ فِقْهٍ وَصَلَاحٍ وَفَضْلٍ وَرُبَّمَا اخْتَلَفُوا فِي الشَّيْءِ فَأَخَذَ بِقَوْلِ أَكْثَرِهِمْ وَأَفْضَلِهِمْ رَأْيًا. فَكَانَ مِمَّا وَعَيْتُ عَنْهُمْ عَلَى هَذِهِ الصِّفَةِ: «أَنَّ الْوِتْرَ ثَلَاثٌ لَا يُسَلِّمُ إِلَّا فِي آخِرِهِنَّ»
 فَهَذَا مَنْ ذَكَرْنَا مِنْ فُقَهَاءِ الْمَدِينَةِ وَعُلَمَائِهِمْ قَدْ أَجْمَعُوا أَنَّ الْوِتْرَ ثَلَاثٌ لَا يُسَلِّمُ إِلَّا فِي آخِرِهِنَّ.

অর্থ: আমি বিখ্যাত সাত ফক্বীহ অর্থাৎ, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ, উরওয়া ইবনে যুবায়ের, আবূ বকর ইবনে আব্দুর রহমান, খারিজা ইবনে যায়েদ, উবাইদুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ও সুলাইমান ইবনে ইয়াসার রহ.-এর যুগ পেয়েছি, যারা ইলম ও তাক্বওয়ায় অনবদ্য ছিলেন। নিজেদের মধ্যে কখনো মতভেদ হলে তাদের অধিকাংশের মত, কিংবা প্রাজ্ঞতার বিচারে যিনি অগ্রগণ্য তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতো। এ মূলনীতি অনুসারে তাদের যেসব সিদ্ধান্ত আমি ধারণ করেছি তন্মধ্যে একটি হচ্ছে, তারা সকলে একমত হয়েছেন বিতর নামায তিন রাকা‘আত, আর কেবল শেষ রাকা‘আতে সালাম ফিরাবে।

ইমাম তহাবী বলেন: সুতরাং বোঝা যায়, মদীনার যেসকল ফক্বীহ ও আলেমের নাম উল্লেখ করা হলো তারা এ বিষয়ে একমত যে, বিতর তিন রাকা‘আত এবং একটি সালাম হবে তিন রাকা‘আত পূর্ণ করেই। (তহাবী: ২/২০৭, এ হাদীসের বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য- আল্লামা ‘আইনী, নুখাবুল আফকার: ৩/২৮৯)

(৭) হযরত সুফিয়ান সাওরী রহ. তার পূর্বসূরী তাবেঈদের বিতর নামাযের বিবরণে বলেন:

كَانُوا يَسْتَحِبُّونَ أَنْ يَقْرَأَ، فِي الرَّكْعَةِ الْأُولَى: سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى وَفِي الثَّانِيَةِ: قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ ثُمَّ يَتَشَهَّدُ، وَيَنْهَضُ، ثُمَّ يَقْرَأُ فِي الثَّالِثَةِ: قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ.

অর্থ: তারা তিন রাকা‘আত বিতরের প্রথম রাকা‘আতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকা‘আতে সূরা কাফিরূন পড়তেন। তারপর বসে তাশাহহুদ পড়ে আবার উঠে দাঁড়াতেন এবং তৃতীয় রাকা‘আতে সূরা ইখলাস পড়তেন। (সালাতুল বিতর মারওয়াযী: পৃ. ২৭৯। ইবনে হাজার রহ. বলেন, এর সনদ সহীহ। নাতাইযুল আফকার: ২/১১৪,৫০৩)

(৮) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন:

عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «صَلَاةُ الْمَغْرِبِ وِتْرُ النَّهَارِ».

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দিনের বিতর হলো মাগরিবের নামায। তোমরা রাতের নামাযকেও অনুরূপ বিতর করে পড়ো। (ইবনে আবী শাইবাহ হা. নং ৬৭৭৩, ৬৭৭৮, আব্দুর রাযযাক হা. নং ৪৬৭৫, মুসনাদে আহমাদ হা. নং ৪৮৪৭। শায়েখ শুয়াইব আরনাউত বলেন, এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।)

ইমাম মুহাম্মাদ রহ. বলেন:

وَبِهَذَا نَأْخُذُ، وَيَنْبَغِي لِمَنْ جَعَلَ الْمَغْرِبَ وِتْرَ صَلاةِ النَّهَارِ، كَمَا قَالَ ابْنُ عُمَرَ أَنْ يَكُونُ وِتْرُ صَلاةِ اللَّيْلِ مِثْلَهَا، لا يَفْصِلُ بَيْنَهُمَا بِتَسْلِيمٍ، كَمَا لا يَفْصِلُ فِي الْمَغْرِبِ بِتَسْلِيمٍ، وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ، رَحِمَهُ اللَّهُ

অর্থ: আমরা এ বর্ণনাটি গ্রহণ করি: যে ব্যক্তি ইবনে উমর রা.-এর বক্তব্য অনুযায়ী বিতরকে মাগরিবের নামাযের অনুরূপ মনে করে তার উচিত মাগরিবের মতোই বিতর পড়া, যাতে দুই রাকা‘আতের পর সালাম না ফিরায়। এটিই ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর অভিমত। (মুয়াত্তা মালেক, ইমাম মুহাম্মাদের বর্ণনা: পৃ.১৪৯)

৯) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন:

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:  «وِتْرُ اللَّيْلِ ثَلَاثٌ كَوِتْرِ النَّهَارِ صَلَاةُ الْمَغْرِبِ».

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, দিনের বিতর অর্থাৎ, মাগরিবের মতো রাতের বিতরও তিন রাকা‘আত। (সুনানে দারাকুতনী হা. নং ১৬৭২। হাদীসটি হাসান পর্যায়ের, তবে অনেকেই এটিকে ইবনে মাসউদ রা.-এর বক্তব্য হিসেবে সহীহ বলেছেন।)

(১০) হযরত হাসান বসরী রহ. বলেন:

«كَانَ أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ يُوتِرُ بِثَلَاثٍ لَا يُسَلِّمُ إِلَّا فِي الثَّالِثَةِ مِثْلَ الْمَغْرِبِ»

অর্থ: হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. তিন রাকা‘আতে বিতর পড়তেন এবং তাতে মাগরিবের মতোই তৃতীয় রাকা‘আতের আগে সালাম ফিরাতেন না। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা. নং ৪৬৫৯, ৪৬৬০। এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।)

বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেন:

وَمَعْلُومٌ أَنَّ الْمَغْرِبَ ثَلَاثَ رَكَعَاتٍ لَا يُسَلِّمُ إِلَّا فِي آخِرِهِنَّ فَكَذَلِكَ وِتْرُ صَلَاةِ اللَّيْلِ .

অর্থ: আর একথা সর্বজন জ্ঞাত যে, মাগরিবের নামায তিন রাকা‘আত, তিন রাকা‘আত পূর্ণ করেই তবে সালাম ফিরানো হয়। ঠিক তেমনি রাতের বিতরও। (আল ইস্তিযকার: ৫/২৮৩)

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কেউ কেউ বলে থাকেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাগরিবের মতো বিতর পড়তে নিষেধ করেছেন, তাই বিতর এক রাকা‘আত পড়বে। আর তিন রাকা‘আত পড়লেও দুই রাকা‘আত পড়ে সালাম ফিরাবে, অথবা দ্বিতীয় রাকা‘আতে বৈঠক না করে সোজা দাঁড়িয়ে তিন রাকা‘আত পূর্ণ করবে। কিন্তু বিতরের দুই রাকা‘আতে মাগরিবের মতোই বৈঠক হবে, তবে সালাম ফিরাবে না- এর দলীল পূর্বে আলোচিত হয়েছে। বিতরকে মাগরিবের নামাযের মতো পড়তে নিষেধ করার উদ্দেশ্য কী? এ বিষয়ে যথার্থ বক্তব্য হলো- বিতরের ক্ষেত্রে শরী‘আতের কাম্য হচ্ছে কিছু নফল নামায পড়ার পর আদায় করা। এজন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-

«لَا تُوتِرُوا بِثَلَاثٍ تَشَبَّهُوا بِصَلَاةِ الْمَغْرِبِ، وَلَكِنْ أَوْتِرُوا بِخَمْسٍ، أَوْ بِسَبْعٍ، أَوْ بِتِسْعٍ، أَوْ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ»

অর্থ: তোমরা শুধু তিন রাকা‘আত বিতর পড়ো না। এতে মাগরিবের মতো হয়ে যাবে। বরং পাঁচ, সাত, নয়, এগারো বা এর অধিক রাকা‘আতে বিতর পড়ো। (মুস্তাদরাকে হাকেম: ১/৩০৪, হা. নং ১১৩৭, সুনানে কুবরা বাইহাকী: ৩/৩১,৩২) অর্থাৎ, বিতরের আগে কিছু নফল নামায অবশ্যই পড়ো। দুই-চার-ছয়-আট যতো রাকা‘আত সম্ভব হয় পড়ে নাও। ‘বিতরের নামায তিন রাকা‘আত’ বিষয়ক আলোচনার ‘ক’-এর দ্বিতীয় হাদীসে হযরত আয়িশা রা. থেকে পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম চার ও তিন, ছয় ও তিন, আট ও তিন এবং দশ ও তিন এরূপ বিভিন্ন সংখ্যায় রাতের নামায পড়তেন, যেখানে তিন রাকা‘আত ছিলো বিতর।

নিঃসন্দেহে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিতর নামায সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত ছিলেন হযরত আয়িশা রা.। তিনি বলেন:

«لَا يُوتَرُ بِثَلَاثٍ بَتْرَاءَ صَلِّ قَبْلَهَا رَكْعَتَيْنِ، أَوْ أَرْبَعًا»

অর্থ: শুধুই তিন রাকা‘আত বিতর না পড়া উচিত, এটি অপূর্ণ নামায। বরং এর পূর্বে দু’চার রাকা‘আত পড়ে নাও। (ইবনে আবী শাইবাহ হা. নং ৬৮৬৭। এর বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত।)

নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিতর নামাযের প্রত্যক্ষদর্শী অপর সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন:

«إِنِّي لَأَكْرَهُ أَنْ يَكُونَ بَتْرَاءَ ثَلَاثًا , وَلَكِنْ سَبْعًا أَوْ خَمْسًا»

অর্থ: শুধুই তিন রাকা‘আত রাতের নামায পড়া আমি অপছন্দ করি, বরং অন্তত পাঁচ থেকে সাত রাকা‘আত পড়া উচিত। অর্থাৎ, বিতরের সাথে দু’চার রাকা‘আত নফল পড়া উত্তম।

ইমাম তহাবী রহ. এ বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেন-

فَهَذَا عِنْدَنَا عَلَى أَنَّهُ كَرِهَ أَنَّهُ يُوتِرُ وِتْرًا لَمْ يَتَقَدَّمْهُ تَطَوُّعٌ , وَأَحَبَّ أَنْ يَكُونَ قَبْلَهُ تَطَوُّعٌ إِمَّا رَكْعَتَانِ وَإِمَّا أَرْبَعٌ.

অর্থাৎ, আগে কোনো নফল নামায না পড়ে কেবলই তিন রাকা‘আত বিতর পড়াকে তিনি অপছন্দ করেন। তার মতে বিতরের পূর্বে অন্তত দুই বা চার রাকা‘আত নফল নামায পড়া উচিত। (তহাবী: ১/২০৩, আল্লামা ‘আইনী, ইবনে আব্বাসের সনদকে সহীহ বলেছেন। নুখাবুল আফকার: ৫/৮০)

আশাকরি, এসকল বর্ণনা দ্বারা একথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বিতর নামায তিন রাকা‘আত এক সালামে দুই বৈঠকে পড়তে হবে।


Comments

Popular posts from this blog

হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু'র প্রকৃত হত্যাকারী কে....?

ইসলামী গজল গাওয়া বা শোনা কি জায়েজ?

নামধারী আহলে হাদিস বিদাতী ফিরকার ইসলাম বিরোধী ৫০টি ভ্রান্ত মতবাদ