জয়ীফ হাদিস গ্রহণের কারণ কি? পর্ব-১





হাফেয সাখাবী (রহঃ) ফাতহুল মুগীছে বলেন,
“ইমাম আহমাদ (রহঃ) যঈফ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন যখন তিনি কোন অধ্যায়ে উক্ত হাদীস ছাড়া অন্য হাদীস না পান। ইমাম আবু দাউদও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। তারা উভয়েই হাদীসকে যুক্তি ও কিয়াসের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন।
আবু হানীফার (রহঃ) ব্যাপারেও অনুরূপ বলা হবে। আর ইমাম শাফী (রহঃ) মুরসাল রেওয়ায়েত দ্বারা দলীল পেশ করেন যখন তিনি তা ছাড়া অন্য কোন রেওয়ায়েত না পান।

{হাফেয সাখবী, ফাতহুল মুগীছ, পৃষ্ঠা ১২০}

আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনে সাদ আল বাওয়ারদী থেকে বর্ণনা করেন,
“ইমাম নাসাঈর মাযহাব ছিল তিনি প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির হাদীস আনতেন যাকে তরক করার ব্যপারে মুহাদ্দিসীনে কেরাম একমত হননি।
ইবনে মানদাহ বলেন,
অনুরূপভাবে ইমাম আবূ দাউদ ও তার পন্থা অবলম্বন করেছেন। তিনি দুর্বল সনদের হাদীস (তার সুনানে) নিয়ে আসেন যখন তিনি কোন অধ্যায় যঈফ সনদ ব্যতীত অন্য কোন হাদীস না পান। কেননা তার নিকট যঈফ সনদ মানুষের কিয়াস থেকে উত্তম।
আর এটা ইমাম আহমাদ (রহঃ) এরও মত। তিনি বলেছেন, যঈফ হাদীস আমার নিকট মানুষের কিয়াসের চেয়ে অধিক পছন্দনীয়।

[আল্লামা সুয়ূতী, তাদবীবুর রাবী, পৃষ্ঠা ৯৭]

আল্লামা ইবনুল কাইউম হাম্বলী (রহঃ) বলেন,
“ইমাম আহমাদ (রহঃ) যখন কোন অধ্যায়ে কোন আছার পান না, কোন সাহাবীর বক্তব্য পান না বরং এমন যঈফ হাদীস পান যার বিপরীতে উম্মতের ইজমা বর্ণিত হয়নি তখন তার নিকট উক্ত যঈফ হাদীসের উপর আমল করাই উত্তম কিয়াসের চেয়ে।

ইমামদের মধ্য হতে এমন কেই নেই যে যিনি এই মুলনীতিতে একমত নন। তাদের মধ্য হতে একজনও এমন নেই যে যিনি যঈফ হাদীসকে কিয়াসের উপর প্রাধান্য দেন না।

যেমন আবু হানীফা (রহঃ) নামাযে উচ্চস্বরে হাসলে উযূ ভেঙ্গে যাওয়ার হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন যুক্তির উপর। অথচ সমস্ত মুহাদ্দিসীন হাদীসটি যঈফ হওয়ার ব্যাপারে একমত। নাবীযে তামার (খেজুর ভিজিয়ে রাখা পানি) দ্বারা উযূর হাদীসকে প্রধান্য দিয়েছেন যুক্তির উপর। অথচ অধিকাংশ মুহাদ্দিসীন তা যঈফ বলেছেন।

“হায়েযের সর্বোচ্চ সীমা দশ দিন” এই হাদীসকে কিয়াসের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। অথচ সর্বসম্মতিক্রমে তা যঈফ। “দশ দিরহামের নীচে মোহর নেই” এই হাদীসকে যুক্তির উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। অথচ মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদীসটি যঈফ হওয়ার ব্যপারে একমত। বরং অনেকে মওযূ বলেছেন।

অনুরূপভাবে ইমাম শাফী (রহঃ) নিষিদ্ধ সময়ে মক্কায় নামায জায়েয হওয়ার হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন। অথচ তা যঈফ ও কিয়াস পরিপন্থী। তার এক মত অনুযায়ী “কেউ নামাযে বমি করলে বা নাক দিয়ে রক্ত পড়লে সে যেন উযূ করে পূর্বের নামাযের উপর বেনা করে” এই হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন যুক্তির উপর। অথচ হাদীসটি যঈফ এবং মুরসাল।

ইমাম মালেক (রহঃ) মুরসাল, মুনকতে (যার সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে), বালাগাত এবং সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যকে প্রাধান্য দেন কিয়াসের উপর।

আর ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) যখন কোন বিষয়ে দলীল খুজে পান না এবং সাহাবায়ে কেরামের বা তাদের কারো বক্তব্য পান না এবং কোন যঈফ বা মুরসাল রেওয়ায়েতও পান না তখন পঞ্চম মূলনীতি কিয়াসের প্রতি ধাবিত হন।

[ইবনুল কাইউম হাম্বলী, ইলামুল মুওয়াক্কিয়ীন ১/৩১]

ইবনে হাযম (রহঃ) বলেন,
“সমস্ত হানাফী উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে, আবূ হানীফাহ (রহঃ) এর মাযহাব হল, কিয়াস করার চেয়ে যঈফ হাদীসের উপর আমল করা তার নিকট উত্তম যখন তিনি উক্ত হাদীস ছাড়া অন্য কিছু পান না।”

[আন নুকাত আলা ইবনুস সালাহ ২/৩১৯ (শামেলা)]

ইবনে হাযম অন্যত্র বলেন-
“আবু হানীফা (রহঃ) বলেছেন আল্লাহ তা’য়ালার রাসূল থেকে বর্ণিত যঈফ হাদীস আমার নিকট কিয়াসের চেয়ে উত্তম। তা থাকা অবস্থায় কিয়াস করা জায়েয নেই।”

[আল ইহকাম ফি উছূলিল আহকাম ৭/৫৪]

Comments

Popular posts from this blog

হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু'র প্রকৃত হত্যাকারী কে....?

ইসলামী গজল গাওয়া বা শোনা কি জায়েজ?

নামধারী আহলে হাদিস বিদাতী ফিরকার ইসলাম বিরোধী ৫০টি ভ্রান্ত মতবাদ