সাহাবায়ে কেরাম তাকলীদ করতেন
আসলে কোরআন হাদীস থেকে মাসআলা উদ্ভাবন করা এবং মতভেদপূর্ণ ক্ষেত্রে মত প্রদান করা অনেক উচ্চস্তরের আলেমে দ্বীনের কাজ। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, অনেক বিশিষ্ট আলেমের পক্ষেও ঐ স্তরে পৌঁছা সুকঠিন। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই মাযহাব ও তাকলীদ আমাদের জন্য এক অপরিহার্য বাস্তবতা। আমাদের মতোদের জন্য তাকলীদ করতে অস্বীকার করা নিছক একটা হঠকারিতা।
এজন্য আমরা দেখি, সাহাবায়ে কেরামের যুগেই তাকলীদের প্রচলন হয়েগেছে। সাধারণ সাহাবীগণ এবং সেকালের অন্যান্যরা কোনো প্রাজ্ঞ সাহাবীর কাছে মাসআলা জানতে চাইতেন, তিনি কোরআন-সুন্নাহর দলিল উল্লেখ ব্যতীত মাসআলা বলে দিতেন। একজন সাধারণ ব্যক্তি নিজে ইজতিহাদী মাসআলা এবং তার লম্বা-চওড়া দলিল বুঝবে না বলে আলেমগণের উপর আস্থা রেখে শুধু মাসআলা জেনে নিতেন, দলিল তলব করতেন না। কোরআন-সুন্নাহর দলিলসম্মত কিন্তু দলিলের উল্লেখ ব্যতিত সাহাবায়ে কেরামকর্তৃক প্রদত্ত ফতোয়াসমুহ হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত আছে। বিশেষত ইমাম আবু হানীফকৃত ‘কিতাবুল আ-ছার,’ ইমাম মালেককৃত ‘আল-মোয়াত্তা’, ইবনে আবি শায়বাকৃত ‘আল-মুসান্নাফ’ ইত্যাদিতে ফকীহ (শরঈ বিধিবিধান বর্ণনায় পারদর্শী) সাহাবীগণের মাযহাব ও মতামতসমূহ দলিলের উল্লেখ ছাড়াই বর্ণিত আছে।
তো দেখা যাচ্ছে, ঐ ফতোয়াসমুহের অধিকাংশের সঙ্গে দলিলের উল্লেখ নেই, যদিও বাস্তবে তা দলিলসমৃদ্ধ। প্রশ্নকারী ব্যক্তি ঐ সাহাবীর ইলমের উপর আস্থা রেখে আমল করেছেন, আমল করার জন্য দলিল তলব করে নিজে দলিল বুঝার অপেক্ষা করেননি। এটাই তো তাকলীদ!
শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন হলেন আরবের একজন প্রসিদ্ধ আলেমে রব্বানী। শায়খ ইবনে বায রহ.-এর পরই যাকে সবচে বেশি শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়। তিনি লিখেছেন, ‘বাস্তবতা হলো, সাহাবাযুগ থেকেই তাকলীদ বিদ্যমান। নিঃসন্দেহে সাহাবায়ে কেরামের যুগে এবং আমাদের যুগে বিরাট সংখ্যক মানুষ এমন আছে, যারা নিজেরা কোরআন-হাদীস থেকে মাসআলা আহরণ করতে সক্ষম নয়। কারণ দ্বীনী ইলমে তাদের ঐ পরিমাণ দক্ষতা নেই। সুতরাং তাদের কাজ হলো আলেমদের জিজ্ঞেস করে আমল করা। আর এটাই হলো তাকলীদ। (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দরব্ ২/২২০)
Comments
Post a Comment