খারেজী সম্প্রদায়ের নীতি, বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণসমূহ






আহলে হাওয়া (খেয়াল-খুশীর অনুসারী দল), বিভিন্ন ফের্কা ও বিদআতীদের সম্পর্কে গবেষণাকারী বিশিষ্ট লেখক, প্রফেসার, ড. নাসের আল আক্বল বলেনঃ প্রথম যুগের খারেজীদের অবস্থা ভালভাবে অধ্যয়ন করলে দেখা যাবে, তাদের নীতি, বৈশিষ্ট্য ও সাধারণ লক্ষণসমূহ নিম্নরূপঃ 

১-পাপের (বড় পাপের) কারণে কাফের মনে করা এবং বড় পাপকারীকে (মুসলিমকে)  বিভিন্ন বিধানের ক্ষেত্রে কাফের হিসাবে জানা।

২-মুসলিম ইমামদের (শাসকদের) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশ্বাস ও আমল উভয়ের বসবর্তী হয়ে আর অনেক সময় একটির বসবর্তী হয়ে।

৩-মুসলিম জামাআতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। তাদের সাথে বসবাস না করা, সম্পর্ক বিচ্ছেদ করা, পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা, তাদের রক্ত হালাল মনে করা এবং শারঈ হুকুম-আহকামে কাফেরদের মত মনে করা।

৪-সৎ কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধাজ্ঞার দলীল সমূহ শাষকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, তাদের বিরোধিতা করা এবং নিজের (খারেজীদের) বিরোধীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অর্থে ব্যবহার করা।

৫-তাদের মধ্যে জাহেল ক্বারী ও অজ্ঞর সংখ্যা বেশী থাকবে।। তাদের অধিকাংশই যেমন নবী (সাঃ) বলেছেন (অল্প বয়সী ও কম জ্ঞানী হবে)।

৬-তাদের চেহারা-ছবিতে বাহ্যত সৎ লোকের নিদর্শন থাকবে। যেমন বেশী বেশী স্বালাত ও সাউম পালন করা, সাজদার আলামত থাকা, কাপড় ওপরে পরিধান করা, রাত জাগরনের কারণে চোখে কালো আবরণ থাকা, বেশী আল্লাহভীরুতা ( ফিকহ ছাড়াই), এবং সততা ও দুনিয়া বিমুখিতা। সাথে সাথে থাকবে দ্বীনে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন, যেমন নবী (সাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ (তাদের স্বালাতের মুকাবিলায় তোমরা তোমাদের স্বালাতকে তুচ্ছ মনে করবে ... )।

৭-দ্বীনের (ফিকহ) বুঝ এবং শারঈ ইলমের পুঁজি কম থাকবে, যেমন নবী (সাঃ) বর্ণনা দেন (তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গোলা পার হবে না)।

৮-তাদের মধ্যে সাহাবা, আইম্মা, উলামা এবং দ্বীদের জ্ঞানী কেউ থাকবে না। যেমন ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) বলেনঃ “তোমাদের মাঝে তাদের কেউ নেই” অর্থাৎ সাহাবী নেই।

৯-অহংকার করা, জ্ঞানী নয় কিন্তু জ্ঞান প্রকাশের চেষ্টা করা এবং উলামাদের মুকাবিলায় নিজেকে বড় হিসাবে প্রকাশ করা। এমনকি তারা নিজেকে আলী, ইবনু আব্বাস এবং সমস্ত সাহাবা থেকে জ্ঞানী মনে করে। তাদের প্রধানদের অনুসারী থাকবে কম বয়সী, কম জ্ঞানী এবং মুর্খরা।

১০-প্রমাণ করণ তথা ইসতিদলাল পদ্ধতিতে বিচ্যুতি; শাস্তির আয়াত গ্রহণ করবে এবং ক্ষমার দলীল প্রত্যাখ্যান করবে। কাফেরদের সম্পর্কে অবতীর্ণ আয়াতগুলি তাদের বিরোধিতাকারী মুসলিমদের প্রতি প্রয়োগ করবে। যেমন ইবনু উমার (রাযিঃ) বলেনঃ এমন আয়াত যা কুফ্ফারদের সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়, তা তারা মুমিনদের উপর প্রয়োগ করে। [ফাতহুল বারী, ১২/২৮২]

১১-সুন্নত সম্বন্ধে অজ্ঞতা, তাই বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কুরআনের আয়াত দ্বারা দলীল দিবে।

১২-অতি সত্তর পরিবর্তন স্বভাবী। নিজ মত, রায় ইত্যিদি তাড়াতাড়ি পরিবর্তনকারী। (বিনা জ্ঞান ও ইলমে আবেগী) এই কারণে তাদের আপসে মতভেদ ও ঝগড়া বেশী হয়। আর যখন মতভেদ করে, তখন পৃথক পৃথক হয়ে যায় এবং আপসে লড়াই করে।

১৩-বিরোধীদের ব্যাপারে জলদি শরীয়ার বিধান পেশকারী। (বিরোধীদের বিরুদ্ধে যাঁচাই-বাছাই ছাড়াই বিধান ব্যক্ত করে)।

১৪-অন্তরের বিচার করা এবং আন্তরিক বিষয়ের কারণে অপবাদ দেওয়া। কথার মানে এবং অনুমান দ্বারা বিধান নির্ধারণ করা এরই অন্তর্ভুক্ত।

১৫-শরীয়ার বিধান, লেন-দেন, যুদ্ধ ও তর্ক-বিতর্কে বল প্রয়োগ, রূঢ়রতা, কঠোরতা ও নির্দয়তা অবলম্বণ করা।

১৬-অদূরদর্শী এবং অধৈর্য স্বভাবী, ফলাফল পেতে তাড়াহুড়াকারী।

১৭-মূর্তিপূজকদের ছেড়ে মুসলিমদের হত্যা করে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করে, যেই গুণটি হাদীসে উল্লেখ হয়েছে। [খারেজী, ইসলামী ইতিহাসের প্রথম ফের্কা, ড. নাসের আল আক্বল ৩৭-৩৯]


Comments

Popular posts from this blog

হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু'র প্রকৃত হত্যাকারী কে....?

ইসলামী গজল গাওয়া বা শোনা কি জায়েজ?

নামধারী আহলে হাদিস বিদাতী ফিরকার ইসলাম বিরোধী ৫০টি ভ্রান্ত মতবাদ