ওরা আহলে হাদীস না শিয়া? আসুন মোনাফেক চিনি






শিয়ারা যেমন আহলে বাইতের ভালবাসার পর্দার আড়ালে আহলে সুন্নতীদের বিভ্রান্ত করাই মূল লক্ষ্য। ঠিক তেমনি আহলে হাদীস নামধারীরা হাদীসের উপর আমলের মোহাব্বতের নামে আহলে সুন্নতীদের বিভ্রান্ত করা উদ্দেশ্য।

উভয়ের উদ্দেশ্য একই। শিয়ারা যেমন চায় আহলে বাইতের নামে আহলে সুন্নতের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়–ক। আহলে হাদীসরাও চায় আহলে হাদীসের নামে আহলে সুন্নতের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়–ক।

শিয়ারা আহলে বাইত বলে আহলে সুন্নতীদের ধোঁকা দেয়। গায়রে মুকাল্লিদরা আহলে হাদীসের নামে আহলে সুন্নতকে ধোঁকা দেয়। যেমন খারেজীরা আহলে কুরআনের নামে হযরত আলী রাঃ কে ধোঁকা দিত।

শিয়াদের সাথে আহলে হাদীস দাবিদারদের মিলসমূহ

ইজমা কিয়াস অস্বিকার

শিয়ারা যেমন ইজমা কিয়াসকে শরয়ী দলীল মানে না, ঠিক তেমনি আহলে হাদীস নামধারীরাও ইজমা ও কিয়াসকে শরয়ী দলীল বিশ্বাস করে না।

শিয়ারা ইজমা-কিয়াস অস্বিকারকারী বলার দলীল- মানহাজুস সুন্নাহ-১/৮৯।

আহলে হাদীস নামধারীরা ইজমা কিয়াস অস্বিকার করার দলীল আসা করি দেয়ার প্রয়োজন নেই। তাদের প্রায় সকল প্রকাশিত বইয়েই তা বিদ্যমান পাবেন। যেখানেই মাযহাবের বিরোধীতা করেছে, সেখানেই ইজমা কিয়াসকে অস্বিকার করে বক্তব্য দিয়েছে তারা।

আর সবচে’বড় কথা হল, আহলে হাদীসরা ইজমা কিয়াস অস্বিকার করার কারণেই হযরত উমর রাঃ এর আমলে ইজমা হওয়া বিশ রাকাত তারাবীহ মানে না। মানে না তিন তালাকে তিন তালাককে।

চার মাযহাব কেন মানা হয়?

শিয়াদের বক্তব্য হল- চার মাযহাব সঠিক নয়। এ চার মাযহাবের উপর মানুষ কেন আমল করে? {তুহফায়ে ইসনা আশারিয়া-১০৯}

ঠিক একই বক্তব্য প্রদান করে থাকে নামধারী আহলে হাদীসরা। তাই নয় কি?

মানতে হবে দ্বীন মাযহাব নয়

শিয়াদের বক্তব্য হল যে, আল্লাহ তাআলা দ্বীন মানতে আদেশ দিয়েছেন। কোথাও মাযহাব মানার কথা বলেন নি। তাই দ্বীন মানার বদলে মাযহাব মানা কুফরী। তোফায়ে ইসনা আশারিয়া-১০৯}

ঠিক একই দাবি গায়রে মুকাল্লিদদের। তারাও মাযহাব ও দ্বীনের মাঝে ধোঁয়াশা বানিয়ে রাখে। প্রচার করে যে, দ্বীন এক জিনিস আর মাযহাব আরেক জিনিস। মাযহাব মানা মানে দ্বীন মানা নয়। অথচ মাযহাব মানা মানেই দ্বীন মানা। দ্বীন মানার জন্যই মূলত মাযহাবের সৃষ্টি। মাযহাব হল পথের নাম। যা উদ্দিষ্ট লক্ষ্য দ্বীনের পথে চলাকে সহজ করে দেয়।

বর্তমান আহলে হাদীস দল কিয়ামতের নিদর্শন

হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল ইরশাদ করেছেনঃ আমার উম্মতের মাঝে চৌদ্দটি স্বভাব সৃষ্টি হলে তাদের উপর মসিবত আপতিত হওয়া শুরু হবে। তার মাঝে চৌদ্দতম হল এ উম্মতের পূর্ববর্তী ব্যক্তিদের উপর অভিশম্পাত করা। {সুনানে তিরমিজী-২/৪৪}

আমরা ভাল করে খেয়াল করে দেখি। এ উপমহাদেশে কোন দল সবচে’বর্তমানে পূর্ববর্তী নেককারদের বিরোধীতা করে থাকে? কারা বিশ রাকাতের তারাবীহের প্রচলনের কারণে হযরত উমর রাঃ কে, বিভিন্ন কারণে তাবেয়ী, তাবেয়ীগণ, মুজতাহিদ ইমামগণ, হক্কানী পীর মাশায়েখগণ এবং বিশেষ করে এ উপমহাদেশে ইসলামের প্রধান প্রচারক উলামায়ে দেওবন্দ সম্পর্কে জঘন্য সব কটূক্তি করে বেড়ায়। ওরা কারা? সুনিশ্চিতভাবে ওরাই বর্তমানের আহলে হাদীস নামধারী গায়রে মুকাল্লিদ গোষ্ঠি। তাই হাদীসের আলোকে বর্তমানের আহলে হাদীসরা কিয়ামতের নিদর্শন ছাড়া আর কি?

ফিক্বহে হানাফীর বিরুদ্ধে বিষোদগার

ফিক্বহে হানাফীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করার বিষয়ে কথিত আহলে হাদীসদের শিয়াদের মুরীদ বলা যায়।

উপমহাদেশে ফিক্বহে হানাফীর বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম কট্টর শিয়া হামেদ হুসাইন কাস্তুরী সাহেব “ইস্তিকসাউল আফখাম”নামে গ্রন্থ রচনা করে।

এর পরবর্তীতে গায়রে মুকাল্লিদরা যত কিতাব ফিক্বহে হানাফীর বিরুদ্ধে এ উপমহাদেশে লিখেছে তার সব ক’টিই শিয়া লিখকের উর্বর মস্তিস্ক প্রসূত অভিযোগগুলোর ঘষামাজা ছাড়া আর কিছু নয়। {আসসাইফুস সারেম}

ফিক্বহ সম্পূর্ণ অস্বিকারকরণ

মুতলাকানভাবে শিয়ারা যেমন ফিক্বহকে অস্বিকার করে থাকে। ঠিক একই পদ্ধতিতে কথিত আহলে হাদীসরা চার ইমামের ফিক্বহকে অস্বিকার করে থাকে। তাহলে শিয়া আর আহলে হাদীস নামধারীদের মতবাদের মাঝে পার্থক্য রইল কোথায়?

চার খলীফা সমান মর্যাদার?

শিয়াদের আক্বিদা হল হযরত আলী রাঃ এর মর্যাদা হযরত আবু বকর রাঃ হযরত উমর রাঃ ও হযরত উসমান রাঃ এর সমমানের। তাই হযরত আলীকে রেখে বাকি তিনজনকে আগে খলীফা বানানো অবিচার হয়েছে।

ঠিক তেমনিভাবে গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসদের কিতাবে ও হযরত আবু বকর রাঃ, উমর রাঃ অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মানা হয়নি, লিখা হয়েছেঃ

والامام الحق بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم ابو بكر ثم عمر ثم عثمان ثم على ثم الحسن بن على، ولا ندرى ايهم افضل عند الله (نزل الأبرار-1/7)

রাসূল সাঃ এর পর যোগ্য ইমাম হলেন হযরত আবু বকর রাঃ, তারপর হযরত উমর রাঃ, তারপর হযরত উসমান রাঃ, তারপর হযরত আলী রাঃ, তারপর হযরত হাসান বিন আলী রাঃ। আর আমরা জানি না তাদের মাঝে কে আল্লাহ তাআলার কাছে শ্রেষ্ঠ। {নুজুলুল আবরার-১/৭}

অথচ পুরো উম্মতের কাছে রাসূল সাঃ এর পর সবচে’শ্রেষ্ঠতর হলেন আবু বকর রাঃ ও হযরত উমর রাঃ। কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদ দাবিদার হয়ে শিয়াদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে পুরো উম্মতের বিপরীত শিয়াদের মত পোষণ করে দিলেন।

সাহাবীরা ফাসিক নাউজুবিল্লাহ!

আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের মতে সকল সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি। সকলেই ন্যায়পরায়ন। কিন্তু শিয়াদের মতে কতিপয় সাহাবী ছাড়া বাকি সকল সাহাবীরাই ফাসিক। শিয়াদের সাথে সুর মিলিয়ে গায়রে মুকাল্লিদদের কিতাবে লিখা হয়েছে “

ومنه تعلم من الصحابة من هو فاسق كالوليد ومثله يقال فى حق معاوية وعمرو ومغيرة وسمرة

এর দ্বারা বুঝা গেল যে, সাহাবাদের মাঝে যারা ফাসিক ছিল, যেমন ওলীদ বিন উকবা রাঃ। এমনই বলা যায় মুয়াবিয়া রাঃ, আমর বিন আস রাঃ, মুগীরা বিন শুবা রাঃ এবং সামুরা বিন জুনদুব রাঃ এর ব্যাপারে। {নুজুলুল আবরার-৩/৯৪}

এ পাঁচজন বড় বড় সাহাবী তার নিকট ফাসিক। এ ব্যক্তি শিয়া নয়তো কি?

Comments

Popular posts from this blog

হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু'র প্রকৃত হত্যাকারী কে....?

ইসলামী গজল গাওয়া বা শোনা কি জায়েজ?

নামধারী আহলে হাদিস বিদাতী ফিরকার ইসলাম বিরোধী ৫০টি ভ্রান্ত মতবাদ