আদ দাওয়া" কিতাবটি নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা থাকার কথা নয়,

"আদ দাওয়া" কিতাবটি নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা থাকার কথা নয়,কিতাবটি লেখা প্রসঙ্গে অযথা আমার নামটি যুক্ত করা হচ্ছে | ফোন করে কেউ কেউ আমার কি সঠিক বক্তব্য তা জানতে চাইছেন, যে কারণে দু'চারটি কথা বলতে হল, তানাহলে ফেসবুক করার মত আমার কাছে সময়ের অভাব হল যথেষ্ট | প্রথমত কথা হলো পীর আল্লামা সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী (র:)তাঁর জীবদ্দশায় ফুরফুরা শরীফে তাঁর কায়েম কৃত মাসিক জিকিরের মজলিসে আনুমানিক 4 হাজার স্রোতার মাঝে স্বয়ং বলেন আদ দাওয়া হলো আমার বক্তব্য, যা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং আমারই অনুমতিতে প্রকাশিত | এ প্রসঙ্গে মুজাদ্দেদে জামানের ওসিয়াত নামার দৃষ্টান্ত তিনি পেশ করেন | তাছাড়া ফুরফুরা শরীফের ইসালে সওয়াবে নিজ হাতে কিতাবটি মানুষের হাতে হাতে তুলে দেন যার প্রমাণও রয়েছে | এবার কথা হলো মানা না মানার বিষয়টি, সেটা যে যার নিজের ব্যাপার | অথচ কেবলমাত্র উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে একটা শ্রেণী ফেক আইডি খুলে কিতাবটি নিয়ে বিতর্কের অবতারণা করে চলেছে | "দাওয়া" বইয়ের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলেছিলাম,"হযরত ছোট হুজুর পিরকেবলা (র:) নূরের হাদীসটি ওয়াজে বলতেন তাই তাঁর ছেলেরা কেউ কেউ ঐ  সমস্ত ফিতনাবাজ মৌলবী দেরকে সমর্থন করছে" |গুটিকতক মৌলভী নিজেদেরকে প্রচারের আলোতে নিয়ে আসতে কিতাবটি নিয়ে বেশি মাতামাতি করছে, বিশেষ করে নূরের বিষয়টি নিয়ে | কয়েকদিন আগে আমার অজ্ঞাতসারে একটি ভয়েস রেকর্ডিং করে ছাড়া হয় | একথা থেকে নাকি প্রশ্ন উঠেছে হুজুর কেবলা তাহলে ভুল ওয়াজ করেছেন ? ভুল কথাটি কেউ ভেবে নিয়ে থাকতে পারেন, যা তার নিজস্ব ভাবনা আমার কথা তো নয় ! আমি এমন বেয়াদব নই, এমন ধৃষ্টতাও আমার নাই, তাছাড়া ভুল প্রসঙ্গ কেনইবা আসবে তিনি তাঁর নিজের মনগড়া কথা তো বলেননি ইতিহাস এবং বিখ্যাত "সিরাত" গ্রন্থ যথাক্রমে- "তারীখুল খামীস" , "আল মাওয়হিব আল লাদুন্নিয়া" গ্রন্থে আব্দুর রাজ্জাক সূত্রে হাদীসটি থাকাতে, কেবল পীর ছোট হুজুর কেবলা(র:) নন, পীর মেজলা হুজুর কেবলা(র:), খোদ পীর সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী(র:) ,পীর আল্লামা আশরাফ আলী থানোভী(র:), পীর আল্লামা আহমদ রেযা খাঁন(র:),আল্লামা পীর রুহুল আমিন(র:) প্রমূখ নিজ নিজ কেতাবে উক্ত হাদীসটি উল্লেখ করেছেন | তাসাহুল-এর কারণে যদি ভুল হয়ে থাকে, বা দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়ে থাকে তবে তা উল্লিখিত সীরাত ও ইতিহাস গ্রন্থের লেখক দ্বয়ের হতে পারে | তথাপিও এমন কথা বলা আমার মত একজন ক্ষুদ্র জ্ঞানের মানুষের মুখে শোভা পায় না | আরব জাহানের হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত মুহাদ্দেস আব্দুল ফাত্তাহ আবু গোদ্দার কথাটি উল্লেখ করার মতো "ان الله تعالى خلق لكل فن رجال و جعل لكل مقام مقالا" | তবে আমার এ কথা বলার অবকাশ অবশ্যই আছে ,তা হলো এলম হাদিসের ময়দান এতটাই প্রশস্ত যে, যুগে যুগে হাদিস নিয়ে গবেষণা, আলোচনা,পর্যালোচনা, নিরীক্ষণ হয়েছে ,আজও হচ্ছে, এ ধারা চলতেই থাকবে | কারণ নবী পাক (সা:) এর হাদিস তো আর গুটিকতক নয়! (صلى) قال رسول الله বললেই সনদ বা বর্ণনা সূত্র অনুসন্ধান করা হয়ে থাকে | এই ক্ষেত্রে তাসাহুল বা কোমল আচরণ ও সহনশীলতা দেখানোর কারণেই শিথিলতার সৃষ্টি হয়, যার ফলে বড় বড় মুহাদ্দিসগণের সংকলিত গ্রন্থে 'যয়িফ' বা দুবর্বল অতি দুবর্বল এমনকি বহু মাউযূ বা জাল হাদিস ও যে স্থান পেয়েছে , তার দু-একটি নয় বহু বহু নজির রয়েছে | এক্ষেত্রে পরবর্তীকালের হাদিস নিরক্ষণকারী মুহাদ্দিসগণ হাদিস সংকলন গ্রন্থ লেখকদের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে, হাদীসের সনদ ও মতনের ভিত্তিতে হাদীসকে চিহ্নিত করে গ্রহণ ও বর্জন করে থাকেন | যেখানে লেখকের অমর্যাদা করা হয় না | বিশ্ব বিখ্যাত সহহি হাদিস গ্রন্থ হল বোখারী শরীফ এ বিষয়ে বিগত দিন হতে এ পর্যন্ত অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণ প্রায় একমত | এই ধরনের একটি হাদিস সংকলন গ্রন্থের রাবি বা হাদীস বর্ণনা কারীদের মধ্যে ও কয়েকজন রাবির কথা, পরের যুগের মুহাদ্দিসগণ লিখেছেন যারা মিথ্যা দোষে দুষ্ট, অথচ তাদের বর্ণিত হাদিস ইমাম বোখারী (র:) গ্রহণ করেছেন | আল্লামা রুহুল আমিন (র:)একটি হাদীসের তাহকীক বা নিরীক্ষণ করতে গিয়ে জানতে পারেন, এই হাদীসের বর্ণনাকারীদের মধ্যে একজন মিথ্যাবাদী রয়েছেন তাছাড়া হাদীসটি 'দিরায়াত' বা বুদ্ধি ও জ্ঞানের বিপরীত ও বটে, ফলে হাদীসটি মউযূ বলে উল্লেখ করেছেন | তাহলে কি একথা বলা হবে ইমাম বোখারী থেকে আল্লামা রুহুল আমিন (র:) হাদীস শাস্ত্রে বেশি পন্ডিত ছিলেন ? আল্লামা রুহুল আমিন (র:) ইমাম বোখারীর মর্যাদা হানি করলেন ? প্রশ্ন থেকে যায়, ইমাম বোখারী তাহলে সজ্ঞানে এত বড় ভুল করলেন কিভাবে ? হাদীস শাস্ত্রের ভাষায় এটাকে ভুল বলা হয় না এবং সজ্ঞানে ও এ কাজ হয়নি ইমাম  বোখারী দ্বারা বরং মুহাদ্দিসীনদের পরিভাষায় বলা হয়ে থাকে "তাসাহুল" | আল্লামা রুহুল আমিন (র:)সাহেবের মতোই গত 100 বছরে মিশর,মরক্কো,তুরস্ক, আরবের নাকিদে হাদিস মুহাদ্দিসগণ কর্তৃক বহু হাদিস 'যায়িফ' বা দুবর্বল, অতি দুবর্বল ও মউযূ হিসেবে প্রমাণিত হয় এবং তাঁরা স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র কেতাব ও রচনা করেন | দীর্ঘ আলোচনায় না গিয়ে মূল কথায় ফিরা যাক, কিছুদিন হলো আমার নাম করে প্রচার করা হচ্ছে আমি নাকি মীরজাফর, ওয়াহাবি ইত্যাদি তবে এসব অপপ্রচারে আমার কিছু যায় আসেনা | কারন আমার হারাবার কিছু নাই পাবার ও কিছু নাই তবে হ্যাঁ যদি আমার পীর সাজার স্বপ্ন থাকতো, তাহলে ঐ সমস্ত কথা আমার কাছে গুরুত্ব পেত, এমন কোনো পরিকল্পনা বা চিন্তা ধারা আমার নাই | মুজাদ্দেদে জামান (র:)এর প্রতি ভালোবাসা হলো আমার ঈমান, তাঁর দরবারের গোলাম হয়ে হাশরের ময়দানে ওঠার আশা আল্লাহ পাকের কাছে রাখি | ফলে তাঁর পাঁচ আওলাদের উচ্চ মর্যাদার স্থান আমার অন্তরে আছে এবং তা মৃত্যু পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ থাকবে | বাংলার কোন একজন ও প্রমাণ করতে পারবেনা পাঁচ হুজুর পিরকেবলার কোন একজনের সম্পর্কে আমি এমন কোন কথা উচ্চারণ করেছি যা তাঁদের শানের পরিপন্থী হয় | কারন তাঁদের প্রতি আমার ভক্তি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা দুনিয়ার স্বার্থে নয় বরং আখিরাতের স্বার্থেই |

Comments

Popular posts from this blog

নামধারী আহলে হাদিস বিদাতী ফিরকার ইসলাম বিরোধী ৫০টি ভ্রান্ত মতবাদ

হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু'র প্রকৃত হত্যাকারী কে....?

ইসলামী গজল গাওয়া বা শোনা কি জায়েজ?