তৃতীয় রাকা‘আতে রুকূর আগে দু‘আয়ে কুনূত

হযরত আসেম রহ. বলেন:

سَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ القُنُوتِ فِي الصَّلاَةِ؟ فَقَالَ: نَعَمْ، فَقُلْتُ: كَانَ قَبْلَ الرُّكُوعِ أَوْ بَعْدَهُ؟ قَالَ: قَبْلَهُ، قُلْتُ: فَإِنَّ فُلاَنًا أَخْبَرَنِي عَنْكَ أَنَّكَ قُلْتَ بَعْدَهُ، قَالَ: كَذَبَ «إِنَّمَا قَنَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ الرُّكُوعِ شَهْرًا ...

অর্থ: আমি হযরত আনাস রা.কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, হ্যাঁ কুনূত আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, রুকূর আগে না পরে? তিনি বললেন, রুকূর আগে। বললাম, একজন আমাকে বললো- আপনি রুকূর পরে কুনূত পড়ার কথা বলেছেন। তিনি বললেন, সে ভুল বলেছে। রুকূর পরে তো নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু এক মাস কুনূত পড়েছেন। (যা ছিলো মূলত কুনূতে নাযেলা) (সহীহ বুখারী হা. নং ৪০৯৬)

হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেন:

وَقَدْ وَافَقَ عَاصِمًا عَلَى رِوَايَتِهِ هَذِهِ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ صُهَيْبٍ عَنْ أَنَسٍ كَمَا فِي الْمَغَازِي بِلَفْظِ سَأَلَ رَجُلٌ أَنَسًا عَنِ الْقُنُوتِ بَعْدَ الرُّكُوعِ أَوْ عِنْدَ الْفَرَاغِ مِنَ الْقِرَاءَةِ قَالَ لَا بَلْ عِنْدَ الْفَرَاغِ مِنَ الْقِرَاءَةِ وَمَجْمُوعُ مَا جَاءَ عَنْ أَنَسٍ مِنْ ذَلِكَ أَنَّ الْقُنُوتَ لِلْحَاجَةِ بَعْدَ الرُّكُوعِ لَا خِلَافَ عَنْهُ فِي ذَلِكَ وَأَمَّا لِغَيْرِ الْحَاجَةِ فَالصَّحِيحُ عَنْهُ أَنَّهُ قَبْلَ الرُّكُوعِ .

অর্থ: আব্দুল আযীয ইবনে সুহাইব, আসেম-এর উপরিউক্ত বর্ণনার অনুরূপ বর্ণনা করেছেন, যা মাগাযী অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। সে বর্ণনায় রয়েছে যে, এক ব্যক্তি আনাস রা.কে জিজ্ঞাসা করলো- কুনূত রুকূর পরে পড়বে, না (রুকূর আগে) ক্বিরা‘আত শেষ হওয়ার পর? তিনি উত্তরে বলেছেন, ক্বিরা‘আত শেষ হওয়ার পরে পড়বে। ইবনে হাজার রহ. বলেন, কুনূত সম্পর্কে হযরত আনাস রা. থেকে যতোগুলো বর্ণনা পাওয়া যায় সেগুলোর সারনির্যাস হচ্ছে, যে কুনূত বিশেষ উদ্দেশ্যে (কুনূতে নাযেলা) পড়া হয় তা হবে রুকূর পরে। আনাস রা. থেকে সকল বর্ণনায়ই একথা এসেছে। আর সাধারণ কুনূত যা সবসময় পড়া হয় তা সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া গেলেও রুকূর আগে পড়ার কথাই হলো সহীহ বর্ণনা। (ফাতহুল বারী: ২/৫৬৯)

এ ব্যাপারে লা-মাযহাবীদের আস্থাভাজন আলেম নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব বলেন:

وَ ذٰلِكَ أَنَّهٗٗ قَدْ صَحَّ عَنْهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَ سَلَّمَ أَنَّهٗ كَانَ يَقْنُتُ فِي الْوِتْرِ قَبْلَ الرُّكُوْعِ كَمَا يَأْتِيْ بَعْدَ حَدِيْثٍ , وَ يَشْهَدُ لَهٗ آثَارٌ كَثِيْرَةٌ عَنْ كِبَارِ الصَّحَابَةِ كَمَا سَنُحَقِّقُهٗ فِي الْحَدِيْثِ الْآتِيْ بِإِذْنِ اللهِ تَعَالٰى
وَ الْخُلَاصَةُ أَنَّ الصَّحِيْحَ الثَّابِتَ عَنِ الصَّحَابَةِ هُوَ الْقُنُوْتُ قَبْلَ الرُّكُوْعِ فِي الْوِتْرِ، وَ هُوَ الْمُوَافِقُ لِلْحَدِيْثِ الْآتِيْ.

অর্থ: সহীহ সূত্রে প্রমাণিত যে, নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতর নামাযে রুকূর পূর্বে কুনূত পড়েছেন, যার আলোচনা একটি হাদীস পরেই আসবে। উপরন্তু, বিশিষ্ট সাহাবীদের থেকে বর্ণিত অনেক আসারও হাদীসের বিশুদ্ধতার পক্ষে শক্ত দলীল। সারকথা হলো- সাহাবীদের থেকে সহীহ সূত্রে এটিই প্রমাণিত যে, বিতরের কুনূত রুকূর পূর্বে পড়তে হবে। (ইরওয়াউল গালীল: ২/১৬৬)

হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. বলেন:

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، «كَانَ يُوتِرُ فَيَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوعِ»

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতর পড়তেন এবং রুকূর আগে কুনূত পড়তেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ হা. নং ১১৮২)

হযরত আলক্বামা রহ. বলেন:

«أَنَّ ابْنَ مَسْعُودٍ، وَأَصْحَابَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانُوا يَقْنُتُونَ فِي الْوَتْرِ قَبْلَ الرُّكُوعِ»

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও অন্যান্য সাহাবী বিতর নামাযে রুকূর আগে কুনূত পড়তেন। (ইবনে আবী শাইবাহ: ৪/৫২০, হা. নং ৬৯৮৩)

এছাড়া, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., বারা রা., আবূ মুসা আশআরী রা., আনাস রা. ও উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. থেকেও রুকূর আগে কুনূত পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে।

দু‘আয়ে কুনূতের আগে তাকবীর দিয়ে হাত উঠানো ও কুনূত পড়াকালে হাত বেঁধে রাখা:

হযরত আসওয়াদ রহ. বলেন:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، «أَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي قُنُوتِ الْوَتْرِ»

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. দু‘আয়ে কুনূত পড়ার আগে দুইহাত উঠাতেন। (ইবনে আবী শাইবাহ: ৪/৫৩১)

হযরত আসওয়াদ রহ. অন্য বর্ণনায় বলেন:

أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ، «كَانَ إِذَا فَرَغَ مِنَ الْقِرَاءَةِ كَبَّرَ ثُمَّ قَنَتَ، فَإِذَا فَرَغَ مِنَ الْقُنُوتِ، كَبَّرَ ثُمَّ رَكَعَ»

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতর নামাযে ক্বিরা‘আত শেষে কুনূত পড়ার পূর্বে তাকবীর দিতেন। এরপর কুনূত শেষ করে আবারও তাকবীর দিতেন। অতঃপর রুকূ করতেন। (ইবনে আবী শাইবাহ: ৪/৫৩০, হা. নং ৭০২১)

এ দুই রিওয়ায়াত থেকে বোঝা যায়, হযরত ইবনে মাসউদ রা. দু‘আয়ে কুনূত পড়ার পূর্বে তাকবীর বলে হাত উঠাতেন।

হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন:

أَنَّ «الْقُنُوتَ فِي الْوِتْرِ وَاجِبٌ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ وَغَيْرِهِ قَبْلَ الرُّكُوعِ، فَإِذَا أَرَدْتَ أَنْ تَقْنُتَ فَكَبِّرْ وَإِذَا أَرَدْتَ أَنْ تَرْكَعَ فَكَبِّرْ أَيْضًا»  قَالَ مُحَمَّدٌ: وَبِهِ نَأْخُذُ. وَيَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي التَّكْبِيرَةِ الْأُولَى قَبْلَ الْقُنُوتِ كَمَا يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ ثُمَّ يَضَعَهُمَا، وَيَدْعُو. وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ

অর্থ: রামাযানে ও অন্যান্য মাসে রুকূর পূর্বে বিতর নামাযে কুনূত পড়া ওয়াজিব। সুতরাং যখন দু‘আয়ে কুনূত পড়বে তখন তাকবীর দিবে এবং যখন রুকূ করবে তখনও তাকবীর দিবে। ইমাম মুহাম্মাদ রহ. বলেন, এ মতটিই আমরা অবলম্বন করি। তিনি দু‘আয়ে কুনূত পড়ার পূর্বে প্রথম তাকবীর দেয়ার সময় হাত উঠাতেন, যেভাবে নামায শুরু করার সময় হাত উঠাতেন। অতঃপর হাত বাঁধতেন এবং দু‘আয়ে কুনূত পড়তেন। এটিই আবূ হানীফা রহ.-এর অভিমত। (কিতাবুল আসার, মুহাম্মাদ রহ.-এর রিওয়ায়াত হা. নং ২১২)


Comments

Popular posts from this blog

হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু'র প্রকৃত হত্যাকারী কে....?

ইসলামী গজল গাওয়া বা শোনা কি জায়েজ?

নামধারী আহলে হাদিস বিদাতী ফিরকার ইসলাম বিরোধী ৫০টি ভ্রান্ত মতবাদ