আল্লাহ্‌ কী আসমানের উপরে আছেন ?

আকিদা_১৭



أ أمنتم من في السماء .......   ( সূরা মুলক - ১৬ )

* তথাকথিত সালাফিদের তরজমা ও বুঝঃ
তোমরা কী নিশ্চিন্ত হয়েগেছ তার থেকে , যিনি রয়েছেন আসমানে বা আসমানের উপরে .......... ।

* আহলে সুন্নাত ও জামাতের তরজমা ও বুঝঃ
১ – ইমাম কুরতুবী রঃ বলেনঃ
ক - তোমরা কী নিশ্চিন্ত হয়েগেছ ঐ সত্ত্বা থেকে , আসমানে রয়েছে যার ক্ষমতা ও প্রভাব। 
খ – অথবা এখানে উদ্দেশ্য হল “ফেরেশতাগণ” ।
গ – অথবা এখানে উদ্দেশ্য হল “ হজরত জিবরীল ( আলাইহিস সালাম ) 
ঘ – এই অর্থও হতে পারেঃ তোমরা কী নিশ্চিন্ত হয়েগেছ তার থেকে , যিনি সৃষ্টি করেছেন যারা আসমানে আছেন তাদেরকে । ( তাফসীরে তাবারী ২১ / ১২৫ )

২ – ইমাম রাজী রঃ বলেনঃ একটা কথা যেনে রাখোঃ মুশাব্বিহা জাতিরা এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ্‌র জন্য স্থান সাব্যস্ত করে । অথচ সকল মুসলিমরা একমত যে , এই আয়াত তার বাহ্যিক অর্থের উপর হবে না । কেননা আল্লাহ্‌ আসমানে থাকার অর্থ হল আসমান সকল দিক থেকে তাকে বেষ্টন করে নেওয়া , ফলে আল্লাহ্‌ হবেন আসমান থেকে আকারে অনেক ছোট এবং আসমান হবে আরশ থেকে আকারে অনেক ছোট ফলে তখন এটা সাব্যস্ত হবে , আল্লাহ্‌ আরশের তুলনায় তুচ্ছ অথচ সকল " আহলে ইসলামের ঐক্যমত " হল আল্লাহ্‌র জন্য "এটা হওয়া অসম্ভব" । সুতরাং এখানে আয়াতের বাহ্যিক অর্থের পরিবর্তে "তাবীল" করতে হবে , তখন অর্থ হবে , আসমানে যার আজাব রয়েছে , অর্থাৎঃ যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে , আল্লাহ্‌ তাদেরকে আসমান থেকেই আজাব দেন সুতরাং আসমান হল আল্লাহ্‌র আজাবের স্থান , যেমনি ভাবে এই আসমানই আবার আল্লাহ্‌র দয়া ও অনুগ্রহের স্থান । ( তাফসীরে ইমাম রাজী - ৩০ / ৭১ )

৩ – ইমাম বায়জাবী রঃ বলেনঃ
ক - “আসমানে আছেন” অর্থাৎ ঐ সমস্ত ফেরেশতা উদ্দেশ্য যারা বিশ্ব পরিচালনার দায়িত্বে আছেন ।
খ – আল্লাহ্‌ উদ্দেশ্য হতে পারেন , তখন অর্থ হবে আসমানে যার আদেশ বা বিচার চলে । ( তাফসীরে বায়জাবী ৫ / ২৩০ )

৪ – ইমাম সুয়ুতি রঃ বলেনঃ তোমরা কী নিশ্চিন্ত হয়েগেছো ঐ সত্ত্বা থেকে , আসমানে রয়েছে যার ক্ষমতা ও প্রভাব । ( তাফসীরে জালালাইন - ৫৬৩ )

৫ – ইমাম আহমদ বিন মোহাম্মদ আস-সাবী বলেনঃ আসমানে দ্বারা এখানে মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে আসমানে থাকা আল্লাহ্‌র ক্ষমতা ও প্রভাব । ( হাশিয়াতুস সাবী – ৪ / ৩৫০ )

একটি প্রশ্নঃ
কোন কোন সালাফিকে দেখা যায় প্রশ্ন করেঃ আল্লাহ্‌র ক্ষমতা আসমানে , তার মানে কী আল্লাহ্‌র ক্ষমতা জমিনে নেই ?
উত্তরঃ
তাদের এই প্রশ্ন থেকেই বুঝা যায় , তারা পূর্ববর্তীদের তাফসীর না পড়েই নাম লাগিয়েছে "সালাফি" , কারণ যদি পড়তো তাহলে দেখতঃ
১ – ইমাম কুরতুবি শত শত বছর পূর্বেই বলে গেছেনঃ আল্লাহ্‌র ক্ষমতা ব্যপক তারপরেও এখানে আসমানকে খাস করা দ্বারা উদ্দেশ্য হল এই দিকে ইঙ্গিত করা , " তিনি ঐ ইলাহ যার ক্ষমতা আসমানেও চলে " ।
২ – ইমাম সাবী বলেনঃ আল্লাহ্‌র ক্ষমতা নীচেও আছে , তার পরেও উপরে বলার কারণ হল , বিস্ময় প্রকাশ করা এবং ভয় ও শঙ্কাটা যেন একটু কঠিন হয় ।

বাংলাদেশের নামধারী সালাফিরা বলেন , তাদের আকিদার বিরোধিতা করে শুধু দেওবন্দিরা আর তারা হল জাহমিয়া ।
এখন প্রশ্ন হল উল্লেখিত প্রসিদ্ধ যেই পাঁচটি তাফসীর থেকে তাদের আকিদা বিরোধী ব্যাখ্যা দেওয়া হল , তারা কী দেওবন্দের ছাত্র ছিলেন ? অথবা তারা কী জাহমিয়া ছিলেন ? নাউজুবিল্লাহ ।
এদের এমন কথা বলার কারণ হল ,  এরা যদি বলে তাদের আকিদার বিরোধী ছিলেন ইমাম রাজী , ইমাম কুরতুবী , ইবনে হাজারদের , মত হাজারো ইমাম , তখন কেউ এই আকিদা গিলবে না এবং এরা এই আকিদা গিলায় এমন ছেলেদের যারা সূরা ফাতেহা সহি ভাবে পড়তে পারে না , পূর্ববর্তীদের তাফসীর পড়ে এদের জালিয়াতি বুঝা তো বহুত দূরের কথা । 

দেখুন ইমাম রাজি বলছেনঃ “আল্লাহ্‌র জন্য জায়গা সাব্যস্ত করে মুশাব্বিহা জাতিরা” এবং আল্লামা ইবনে হাজারও ফাতহুল বারীতে এদেরকে মুশাব্বিহা বলেছেন । অর্থাৎ ইমাম রাজী ও ইবনে হাজারের যুগের গোমরাহ মুশব্বিহা জাতি বর্তমানে নাম পরিবর্তন করে হয়েছে “সালাফি” । এবং এরা আগের যুগের মুশাব্বিহাদের গোমরাহি আকিদা “সালাফি” নাম দিয়ে গিলাচ্ছে আমাদের দেশের সাধারণ ছেলেদের যারা তাদের কথা যাচাইয়ের জন্য পূর্ববর্তীদের কিতাব খুলে দেখার যোগ্যতা রাখে না । আল্লাহ্‌ এই সাধারণ ভাইদেরকে তাদের গোমরাহি বুঝার তাওফিক দান করুন। আমীন।

সালাফিদের গোমরাহি আকিদা থেকে নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচান।

جزاكم الله خيرا

Comments

Popular posts from this blog

নামধারী আহলে হাদিস বিদাতী ফিরকার ইসলাম বিরোধী ৫০টি ভ্রান্ত মতবাদ

হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু'র প্রকৃত হত্যাকারী কে....?

ইসলামী গজল গাওয়া বা শোনা কি জায়েজ?