শের আলী আফ্রিদি, ইতিহাস তোমায় মনে রাখেনি আমরা কিন্ত ভুলিনি










 কিন্তু মানুষ তোমায় মনে রেখেছে। আন্দামানের মাটিতে বৃটিশ কাউন্সিলর ও ভারতের চতুর্থ ভাইসরয় অত্যাচারী নৃশংস লর্ড মেয়োকে মৃত্যু উপহার দেবার কাহিনী আমরা কতো সহজে ভুলে গেলাম। লর্ড মেয়োর নামে কলকাতায় মেয়ো রোড তো আছে কিন্তু তোমার নামে কিছুই নেই। ক্ষমা করে দিও আমাদের।

শের আলী 1860 সালে পাঞ্জাবের মাউন্ট পুলিশে ব্রিটিশ প্রশাসনের পক্ষে কাজ করেছিলেন। তিনি খাইবার এজেন্সি (বর্তমানে একটি ফেডারেল শাসিত উপজাতীয় এলাকা) থেকে তিরহা উপত্যকা থেকে এসে পেশোয়ারের কমিশনারের কাজ করেন। পরে একটি অশ্বারোহী রেজিমেন্টে অম্বালায় ব্রিটিশদের চাকরি করেন। তিনি প্রেসিডেন্সি বাহিনীতে (ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে চাকরি করেন), 186২ সালের ভারতীয় বিদ্রোহের জন্য রোহিঙাড এবং ওউডডাইটিংয়ে চাকরি করেন। তিনি পেশোয়ারের একটি ঘোড়দৌড়ের সেনাপতি হিসেবে এবং রেনেল টেলরকে মাউন্ট করা ক্রম অনুসারে মেজর হিউ জেমসের অধীনে কাজ করেছিলেন। বৃটিশ বাহিনীতে তার ভালো কাজের জন্য তাকে একটি ঘোড়া, পিস্তল এবং শংসাপত্র দিয়ে সম্মানিত করা হয়। শের আলী ইউরোপীয়দের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন এবং টেলরের শিশুদের যত্ন ও দেখাশোনা করতেন। একটি পারিবারিক শত্রুতাতে, তিনি এক বৃহস্পতিবার পেশোয়ারে তাঁর এক আত্মীয়কে হায়দুর নামে হত্যা করে এবং যদিও তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলেন, তবে 1867 সালের ২ এপ্রিল তিনি মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত হন। আপীল করার পর তাঁর দৃঢ় বিশ্বাসকে দেখে বিচারক কর্নেল পোলক তার শাস্তি হ্রাস করেন এবং তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য তাঁকে কালা পানী বা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে দ্বীপান্তর করা হয়। তিনি পোর্ট ব্লেয়ারে একটি নাবিক হিসেবে কাজ করার অনুমতি পান কারণ তিনি তার আগমনের পর ভাল আচরণ করেছেন বলে বৃটিশ সরকারি আধিকারিকরা স্বীকার করেন।

আন্দামান তখন দ্বীপান্তরিত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভিড়ে ভর্তি। বৃটিশ আদালতের সাজা পেয়ে গোটা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তখন প্রায় দিনই কেউ না কেউ আসছেন। আন্দামানে আসার পর ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাথে থাকার সময় শুরু হয় তার জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়। মাঝের এই দিনগুলোর কাহিনী কেউ সঠিক জানাতে পারেননি, কারণ সবই চলেছিল খুব গোপনে।

লর্ড মেয়ো এডিডের খুন

রিচার্ড বুরকে, 1862 সালের ভারতবর্ষের ভাইসরয় মেয়ো 6ম আর্ল, 1872 সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে গিয়েছিলেন। এই দ্বীপপুঞ্জ তখন অপরাধী ও রাজনৈতিক বন্দি উভয়েই ভারত থেকে অভিযুক্তদের জন্য ব্রিটিশ দন্ডবিধির উপনিবেশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। লর্ড মেয়ো পোর্ট ব্লেয়ারের শাসন বিভাগের দায়িত্বে জড়িত ছিলেন, পোর্ট ব্লেয়ার তখন দ্বীপপুঞ্জের প্রধান শহর। 8 ই ফেব্রুয়ারি ভাইসরয় তার পরিদর্শন সম্পন্ন করে প্রায় সন্ধ্যে 7.00 টায় তার নৌকায় ফিরে আসেন, যেখানে লেডি মেয়োও তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। হটাৎ অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে আসেন শের আলি আফ্রিদি এবং লর্ড মেয়োর বুকের ওপর চালাতে থাকেন ধারালো ছুরির কোপ। ঘটনার বিহ্বলতা কাটিয়ে  শের আলীকে অবিলম্বে বারোজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করে। কিন্তু ততক্ষণে লর্ড মেয়ো খুব শীঘ্রই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।

মাঝের ওই অজানা অধ্যায়ে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। কে তাকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করলেন, কারা লর্ড মেয়োকে খুন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, কিভাবে খুনের পরিকল্পনা তৈরি হলো, আর কে কে তাকে সহায়তা করেছিলেন ইত্যাদি প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি। তখন কোন মিডিয়া আন্দামান পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। যে সমস্ত জাহাজ যাওয়া আসা করতো তাদের নাবিকদের কাছেই যেটুকু খবর এসে পৌঁছাতো সেইটুকুতেই আমরা জানতে পারতাম।

যারা বলছেন শের আলীকে আমরা ভুলে গেছি কারণ তিনি মুসলিম ছিলেন, তারা ভুল বলছেন। কারণ যারা ওই ঘটনার সঙ্গী ও প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তারা কেউই আর মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে ফিরে আসতে পারেননি, তাই ঘটনার বিস্তার জানা সম্ভব হয়নি। বড়লাটকে হত্যার মতো এতো বড় একটা বিষয় ভারতে ছড়িয়ে পড়লে স্বাধীনতা সংগ্রাম আরো ব্যপক অনুপ্রেরণা লাভ করতো, তাই বিশেষ গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। পুরো বিষয়টি ছোট্ট দ্বীপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এতো বড় একটা ঘটনার বিস্তারিত অনুসন্ধান করা উচিৎ ছিলো। আজকের মিডিয়া সেই অনুসন্ধান করতে উৎসাহী হবে কি না জানিনা।

Comments

Popular posts from this blog

হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু'র প্রকৃত হত্যাকারী কে....?

ইসলামী গজল গাওয়া বা শোনা কি জায়েজ?

নামধারী আহলে হাদিস বিদাতী ফিরকার ইসলাম বিরোধী ৫০টি ভ্রান্ত মতবাদ